ED হানা দেওয়ার পর থেকে শিরোনামে শাহাজাহান শেখ। সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা। যাঁর নামে নাকি বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। শাহাজাহানের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ গ্রামবাসীর। জমি দখল থেকে নারী নির্যাতন, কী নেই সেই তালিকায়। তবে এত অভিযোগ সত্ত্বেও প্রায় দেড় মাস ধরে পলাতক শাহাজাহান।
তবে শাহাজাহান একদিনে তো শাহাজাহান হননি। বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে শাহাজাহান তখন সেই দলের 'সম্পদ' হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাহাজাহানের রকেট গতিতে উত্থান হয় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর। জমি, ভেড়ি দখলের অভিযোগ উঠতে শুরু করে তাঁর বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর এও দাবি, শাহাজাহানের কথায় পুলিশ ওঠা-বসা করত। অভিযোগ নেওয়া হত না শাহজাহানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্তমানে তৃণমূলের সন্দেশখালী ইউনিটের সভাপতি এই শাহাজাহান। তাঁর প্রভাব-ক্ষমতা নাকি এলাকার যে কোনও সাংসদ বা বিধায়কের চেয়ে বেশি। এলাকায় 'ভাইজান' নামেও ডাকা হয় তাঁকে। জানা গেছে, ২০০০ সাল পর্যন্ত শাহজাহান কখনও কন্ডাক্টরের কাজ করতেন আবার কখনও সবজি বিক্রি করতেন। মাঝে মাঝে ট্রেকার ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামায় শিক্ষার কলামটি খালি রেখেছিলেন শাহজাহান।
শাহাজাহানের সম্পত্তি কত? ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হলফনামা দাখিল করেছিলেন শাহজাহান শেখ। সেখানে তিনি জানান, তাঁর ১৭টি গাড়ি ও ১৪ একর জমি রয়েছে। এই জমির দাম চার কোটি টাকা। তার কাছে আড়াই কোটি টাকার সোনার গয়নাও রয়েছে। এছাড়াও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১.৯২ কোটি টাকা জমা রয়েছে। হলফনামায় শাহজাহান নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বার্ষিক আয় ২০ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু, শাহাজাহানের রাজনীতিতে কীভাবে প্রবেশ করলেন? শাহজাহান শেখের চাচা মোসলেম ছিলেন সন্দেশখালির CPIM নেতা। তিনি পঞ্চায়েত প্রধানও ছিলেন। চাচার কারণেই শাহজাহান রাজনীতিতে আসেন। শাহজাহান প্রথমে চাচার তত্ত্বাবধানে মাছ ধরার ব্যাবসা করতে থাকেন। এরপর শাহজাহানের খ্যাতি বাড়তে থাকে। চাচার সহায়তায় এলাকায় নিজের দখল শক্ত করেন। শাহজাহান তাঁর ব্যবসার জন্য এলাকার শতাধিক বেকার যুবককে কাজ দেন। এছাড়াও কারও বিয়ে হচ্ছে না, কারও শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে হবে, সব ব্যাপারে শাহাজাহান সাহায্য করতেন বলে জানিয়েছেন সন্দেশখালির বাসিন্দাদের একাংশ। এভাবে তিনি অনেকের কাছে 'মসিহা' হয়ে ওঠেন।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় পালাবদলের আগে শাহজাহান তৃণমূল করতেন। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শাহজাহানও পাল্টি খান। ২০১৩ সালে টিএমসিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে শাহজাহান সারবেরিয়া আগরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান হন। তারপর থেকে তাঁর রমরমা শুরু হয়। একের পর এক জমি দখল ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠতে শুরু করে তাঁর বিরুদ্ধে।