কাল, সোমবার ফের সুপ্রিম কোর্টে উঠতে চলেছে রাজ্যের ডিএ (Dearness Allowance) মামলা। বিচারপতি হৃষিকে রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা উঠবে। এই মামলার দিকে তাকিয়ে রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী। এর আগে ১১ বার এই মামলা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কোনও নির্দেশ দেয়নি। মামলাটি গৃহীত হোক, এই আবেদন করা হবে রাজ্যের সরকারের তরফে। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলোর আদালতের কাছে দাবি থাকবে, রাজ্য সরকারের এসএলপি যাতে গ্রহণ করা না হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে প্রথম বার ওঠে ডিএ মামলা (Dearness Allowance Hearing)। তারপর কেটে গেছে দেড় বছরেরও বেশি সময়। তবে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি একবারও হয়নি। মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ও সরকারি কর্মচারী পরিষদের অভিযোগ, বারবার ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠলেও শুনানি হয়নি। ফলে মামলা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে হতাশ রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পেলেও তাদের AICPI মেনে ডিএ দেওয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগ করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের আরও অভিযোগ, এভাবে দিনের পর দিন বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বাংলার কর্মীরা। এই রাজ্যের থেকে অনেক ছোটো রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই নিয়ম মানছে না। এদিকে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা ঝুলে থাকায় হতাশ কর্মচারীদের একাংশ। তবে হাল ছাড়ছে না মামলাকারী সংগঠনগুলি।
সুপ্রিম কোর্টের মামলা নিয়ে সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'সোমবার মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠবে এবং তার শুনানি হবে এই বিষয়ে আমরা আশাবাদী। রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মী-পেনশনাররা মামলার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও সেই হারে ডিএ বাড়েনি। ফলে বিশবাঁও জলে সরকারি কর্মীদের ভবিষ্যৎ। রাজ্য সরকার প্রচুর টাকা খরচ করে অভিষেক মনুসিংভির মতো আইনজীবীকে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে সুপ্রিম কোর্ট এখনও রাজ্যের দায়ের করা এলএলপি গ্রহণ করেনি। আমাদের বিশ্বাস সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি গ্রহণ না করে সরকারি কর্মীদের পক্ষেই রায় দেবেন। কারণ, কোর্ট বারবার জানিয়েছে, মামলাটির নিস্পত্তি তাঁরা করবেন। যদি সেটা না বলত, তাহলে আগেই রাজ্য সরকারের আবেদন গ্রহণ করে নিত। আমরা আশাবাদী সরকারি কর্মীরা শেষ হাসি হাসবে।'
আর এক মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের শ্যামল মিত্র বলেন, 'সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে সব রাজ্যের আদালত কর্মী-বিচারকদের বকেয়া আটকে রয়েছে প্রায় ২০ টি রাজ্যের, সেই সব সরকারকে বকেয়া মেটাতে হবে। অন্যথা কোর্টে হাজিরা দিতে হবে। অর্থাৎ মাননীয় প্রধান বিচারপতি কোর্টের কর্মীদের ভাতা, বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তৎপর। সেই রায় থেকে আমরা আশাবাদী সোমবার আমাদের মামলার শুনানি হবে। আমাদের পক্ষে রায় আসবে। যদি তা না হয় তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএর দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। ২০২২ সালে হাইকোর্ট রাজ্যকে কর্মচারীদের কেন্দ্রের সমতুল ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টে জয়ী হওয়ার পরও দাবি মতো ডিএ পাননি রাজ্য সরকারি কর্মীরা। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তাদের তরফে এলএলপি দায়ের করা হয়। এই এসএলপি যদি গৃহীত হয় তাহলে মামলা এখন চলবে। আর যদি তা না হয় তাহলে হাইকোর্টের রায় মান্যতা পাবে। সেক্ষেত্রে পুজোর আগে বকেয়া সহ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেতে পারেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।