পশ্চিমবঙ্গ দিবসের দিন ও রাজ্য সঙ্গীত বাছা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক। মঙ্গলবার এনিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নবান্ন সভাঘরে বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ লোকজনই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করার জন্য পয়লা বৈশাখের পক্ষেই মত দেন। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পাশাপাশি রাজ্য সঙ্গীত বাছা নিয়েও মঙ্গলবার আলোচনা হয়। যা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে ঠিক করার। যদিও এটা নিয়েও শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হওয়া যায়নি বৈঠকে। এই গানের মধ্য়ে রয়েছে, 'বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা– সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান। বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন– এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান' এর মতো শব্দ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বৈঠকে প্রস্তাব দেন 'বাঙালি' শব্দ বদলে 'বাংলা' করার। যদিও তাঁর প্রস্তাবে কাউকে সায় দিতে দেখা যায়নি। বরং গানের শব্দ বদল নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন এসএউসিআই-র প্রতিনিধিরা।
আপত্তি শুনে মমতা বলেন, তাহলে 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা' গানটিকে রাজ্য সঙ্গীত করা হোক। যদিও এই প্রস্তাবেও মেলে না উপস্থিত সকলের সম্মতি। তখন মমতা এনিয়ে সকলের মতামত ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানোর কথা বলেন। তিনি এটাও বলেন যে ৭ সেপ্টেম্বর এটা নিয়েও বিধানসভায় আলোচনা হবে।
এদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শব্দ বদলের প্রস্তাব আসায় জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে জোর চর্চা চলছে। অনেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিই এনিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার একধাপ এগিয়ে রাজ্য সঙ্গীত করার প্রস্তাব নিয়েই আপত্তি তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ বদলের প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, 'না আমি মনে করি না, রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ বদলানো উচিত। এর আগে 'জন গণ মন' নিয়ে এরকম একটা প্রস্তাব উঠেছিল। বলা হয়েছিল 'পঞ্জাব ও সিন্ধু' বদলে 'পঞ্জাব ও অসম' করার। তাই রবীন্দ্রনাথের গান যেমন আছে সেরকমই রাখা উচিত। আর 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা' গানটা একটা দেশের জন্য। সেখানে আছে 'সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি'। এটা দেশকে নিয়ে গান। পশ্চিমবঙ্গ তো কোনও দেশ নয়। এটা রাজ্য। দেশের জন্য গানকে রাজ্যের জন্য ব্যবহার করা যায় না বলেই আমি মনে করি। সে ক্ষেত্রে শব্দ না বদলে 'বাংলার মাটি বাংলার জল' আরও ভাল নির্বাচন।'
আপনি কি মনে করছেন রাজ্য সঙ্গীতের কোনও প্রয়োজন আছে? জবাবে পবিত্র সরকার বলেন, 'এটা ভাবাবেগের বিষয়। আমার মনে হয় সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে না যাওয়া ভাল। জাতীয় সঙ্গীত ঠিক আছে, রাজ্যে রাজ্যে আলাদা আলাদা সঙ্গীতের কী প্রয়োজন? এর কোনও অর্থ হয় না। বাংলা নিয়ে অনেক গান আছে, সবগুলোই গাইতে পারব। আমি যে কোনও নির্দিষ্ট গানকে রাজ্য সঙ্গীত করার বিপক্ষে।' এনিয়ে কবীর সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল Bangla.aajtak.in। তিনি বলেন, 'আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। মার্জনা করবেন। আমার কোনও মতামত নেই এ বিষয়ে। আমি বাংলা খেয়াল নিয়ে বেশ আছি। থাকতে দিন। সকলের মঙ্গল হোক।'
এসইউসিআই-র তরুণ নস্কর নবান্নের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। বুধবার তিনি বলেন, 'বাংলার মাটি বাংলার জল গানে শব্দ বদল নিয়ে আমাদের আপত্তি তো রয়েছে। এছাড়াও ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটিকেও রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বাংলায় বহু ধর্মের মানুষের বাস। তাই এই গানটি করা যায় না।'