রাজ্যে ক্রমশ কমছে সরকারি বাসের সংখ্যা। যার ফলে ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর সেই অভিযোগ খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও গিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার পরিবহণ মন্ত্রী ও পরিবহণ দফতরের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বৈঠকেই আরও ঘন ঘন বাস চালানোর পরামর্শ দিলেন তিনি। সঙ্গে প্রস্তাব, 'প্রয়োজনে ৩ শিফটের বদলে ৪ শিফটে কাজ করানো হোক পরিবহণ কর্মীদের'।
অনেক সময়ই অভিযোগ আসে সরকারি বাসের সংখ্যা নাকি কমে গিয়েছে। বহু সময়ে বহু নিত্যযাত্রী বিশেষ করে যাঁরা অফিস যাত্রী তাঁরা দাবি করেন দাঁড়িয়ে থেকে বাস পাচ্ছেন না। এই নিয়ে বৈঠকে উষ্মাপ্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, রাস্তায় সরকারি বাসের সংখ্যা কমছে। কিন্তু তেলের জন্য খরচ বাড়ছে কেন? পরিবহন দফতরের রিভিউ মিটিং-এ প্রশ্ন করেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বেতন দিতে সমস্ত টাকা খরচ হয়ে গেলেও আয় বাড়ছে না বলে দাবি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী দু’টি বাসের মাঝের সময় কমানোরও পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে তিন শিফটের বদলে চার শিফটে কাজ করানো হোক, সেই প্রস্তাবও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকেই সরকারি বাসের অপ্রতুলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী সরকারি বাসের ভাড়া না-বাড়ানোর অবস্থানেই অনড় থেকেছেন। বেসরকারি বাসে উঠলেই এই মুহূর্তে ১০ টাকা দিতে হয়, ৷ কিন্তু সরকারি বাসের ক্ষেত্রে নূন্যতম ভাড়া সাত টাকা ৷ এক্ষেত্রে ভাড়া অপরিবর্তিত রেখে বিকল্প উপায়ে কীভাবে আয় বাড়ানো যায়, পরিবহণ মন্ত্রীকে তার পরিকল্পনা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ৩ শিফটে বাস চালানোর পরিবর্তে ৪ শিফটি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন ৷ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অবস্থান নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে , আগামী দিনে এসবিএসটিসি অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম ও এনবিএসটিসি অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগমকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার ভাবনা রয়েছে সরকারের ৷ মুখ্যমন্ত্রী চান, পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের সঙ্গেই বাকি দুটো পরিবহণ নিগমকে মিলিয়ে দিতে ৷ পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টে মামলার কারণে আটকে রয়েছে ১১৮০ বাস। সবগুলিই ই-বাস। ওই বাস যদি রাস্তায় নামে, তাহলে পরিবহণে সমস্য়া কমবে।
পরিবহণ নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সাম্প্রতিক নেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে টোটো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বহু গরিব মানুষের রুজি-রুটি জড়িয়ে রয়েছে টোটোর সঙ্গে ৷ মুখ্যমন্ত্রী চান, টোটো নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হোক ৷ আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক টোটোকে। কীভাবে এই কাজ করা যায়, সে বিষয়ে আইনি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করতে পরিবহণ মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণ মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা, পরিবহণ সচিব, ছিলেন ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতা পুলিশের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান মদন মিত্র ৷