পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন রাজভবনের মহিলা কর্মী। সংবিধানের বিধান নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি। যৌন হেনস্থার অভিযোগকারী মহিলারা তাঁর নাম গোপন রেখেছেন। রাজভবনের ওই চুক্তিভিত্তিক মহিলা কর্মচারী তাঁর দায়ের করা আবেদনে সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে দেওয়া রক্ষাকবচ পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন। আসলে সংবিধানের ৩৬১ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও আদালতে কোনও ফৌজদারি মামলা শুরু বা চালিয়ে যাওয়া যায় না। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে, রাজ্যপালকে লিখিত নোটিশ দেওয়ার দু মাস পরে কার্যক্রম শুরু করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
ওই মহিলা দাবি করেছেন, এই বিশেষ ছাড়ের কারণে তাঁর মতো ভুক্তভোগীর কাছে অন্য কোনও আইনি বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় যতদিন রাজ্যপাল পদে সিভি আনন্দ বোস যতদিন থাকবেন ততদিন বিচারের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। ৩৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত করা যায় না। মহিলার যুক্তি, রাজ্যপাল অপরাধমূলক কাজের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ দাবি করতে পারেন না। এই ধরনের রক্ষাকবচ অযৌক্তিক ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। পিটিশনে মহিলা সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রদত্ত ছাড় সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করার দাবিও জানিয়েছেন। যা রাজ্যপালের অফিস করতে পারে। এছাড়াও পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করার এবং তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যপালের বক্তব্য রেকর্ড করানোর দাবিও জানিয়েছেন ওই মহিলা। এ ছাড়াও সম্মানের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধও করেছেন মহিলা।
অভিযোগ অনুযায়ী, চাকরির অজুহাতে ২৪ এপ্রিল ও ২ মে ওই কর্মচারীকে রাজভবনে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। সেখানেই যৌন হেনস্থার শিকার হন তিনি। যদিও গোটা বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন রাজ্যপাল বোস। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। রাজ্যপাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশকে কোনও সহযোগিতা করবেন না। এমনকি রাজভবনে পুলিশ কর্মীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়েরের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত করছে এই আট সদস্যের কমিটি। তিনি রাজভবন থেকে ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছিলেন। তা দেওয়া হয়নি। বরং রাজভবন থেকে সংবাদ মাধ্যমের জন্য ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই মহিলাকে পুলিশের কাছে যেতে বাধা দেওয়ায় রাজভবনের কয়েক জনের আধিকারিকের নামে মামলাও রুজু করেছিল পুলিশ। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিরা আজীবন রক্ষাকবচ পান না। যতদিন পদে আছেন ততদিনই তিনি সংবিধান প্রদত্ত রক্ষাকবচ পাবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু হতে পারে। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হতে পারে।