ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, শিল্প, সমাজ বিজ্ঞান, সাহিত্য। এই সব বিষয়ে অনন্ত জ্ঞান ছিল স্বামী বিবেকানন্দর। তাঁর প্রয়াণের এত বছর পরেও তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর উপদেশাবলী আজও আমাদের জীবনের পাথেয়। যুব সমাজে আজও উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দেয় স্বামীজির বাণী। সেই কারণে স্বামীজিকে যুব সমাজের আদর্শ বলে মনে করা হয়। ছোটবেলা থেকেই স্বামীজি পশু-পাখী খুব ভালোবাসতেন। পশু-পাখীর প্রতি বিবেকানন্দের অপত্য স্নেহ ছিল।
স্বামীজির পৈতৃক বাড়ি সিমলা স্ট্রিটে, আর বাড়িতেই ছোটখাটো চিড়িয়াখানা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই চিড়িয়াখানায় কি ছিল না। গরু, মোষ, হাঁস, হরিণ, বাঁদর, ছাগল, পায়রা সব। নরেন এদের সকলকে খুব ভালোবাসত। নিজের হাতেই এদের যত্ন নিত নরেন। তবে এই নরেন যখন বিবেকানন্দ হয়ে উঠলেন, তাঁর তখনও এই পশুপ্রেম ছিল অটুট। বেলুড়মঠেই তিনি একইরকম চিড়িযাখানা বানিয়ে ফেলেছিলেন। তাদেরকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি। এই পশুপাখীরাও মনের আনন্দে নির্ভয়ে সারা বেলুরমঠ ঘুরে বেড়াত। হাঁস, ছাগল, হরিণ, সারস, মোষ,কুকুর ,গাভী- কি ছিলো না সেখানে। স্বামীজি এদের প্রত্যেকের নামও দিয়েছিলেন আলাদা আলাদা করে।
স্বামীজির বাঘা আর লায়ন নামে দুটি কুকুরও ছিল। তার মধ্যে বাঘা ছিল স্বামীজীর অতি প্রিয় ও আদরের। রাজস্থানের খেতরতে থাকাকালীন স্বামীজির ইচ্ছানুসারে, খেতরির মহারাজ অজিত সিংহ বন্য প্রাণী সংগ্রহ করে নিজের রাজপ্রাসাদে একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষনাগার বানিয়ে ছিলেন। এই এতোগুলি পোষ্যের মধ্যে স্বামীজীর সবচেয়ে প্রিয় পোষ্য ছিলো বাঘা। সে ছিলো সাধারণ ভারতীয় কুকুর। কিন্তু জানেন কি প্রিয় সারমেয়ওটির উপরেও একবার বেজায় চটেছিলেন স্বামীজি।
বরাহনগর থেকে স্বামীজির জন্য পানীয় জলের কল থেকে জল আনত হরিপদ মহারাজ। সেই জল দিয়েই স্বামীজি ঠাকুরের পুজো করতেন। স্বামীজির প্রিয় কুকুর বাঘা একদিন সেই পুজোর জল নষ্ট করে দেয়। স্বামীজি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে হরিপদ মহারাজকে আদেশ দিলেন, বাঘাকে মঠ থেকে তাড়িয়ে দাও। গঙ্গার ওপারে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়ারও হুকুম দেওয়া হয়। যেই কথা সেই কাজ। বাঘাকে দিয়ে আসা হল গঙ্গার ওপারে।
তবে লাভ কিছু হল না। কিছুক্ষণ পরে সেইদিনই খেয়াঘাটের নৌকার উপরে এসে বসল বাঘা। সে সময়ে মাঝিরা তাকে মঠের কুকুর বলেই চিনত। তারা বাঘাকে পার করে দিল। বাঘা নাচতে নাচতে স্বামীজির কাছে গিয়ে হাজির। তিনি বাঘাকে দেখা মাত্রই রেগে গেলেন । হরিপদ মহারাজের ডাক পড়ল। সত্যি তাকে ওপারে বিদায় করা হয়েছিল কিনা জানলেন। মাঝিদের সাহায্যে সে ফিরে এসেছে, তাও জানলেন। আবার হুকুমও দিলেন, ফের ঐভাবে ওপারে দিয়ে আসতে। সঙ্গে এও বললেন যে, মাঝিদেরও যেন বলে দেওয়া হয়, তাকে ফিরিয়ে আনতে নিষেধ আছে। ওদিকে বাঘা নাছোড়বান্দা। দ্বিতীয়বারও প্রায় একপ্রকার জোর করেই, সে নৌকায় চেপে খুঁটি গেড়ে বসলো, কিছুতেই নামবে না। লাঠির ভয়েও না। ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। কোনও কিছুতেই তাকে নৌকো থেকে নামানোই গেলো না। মাঝিরা আর কি করবে ! ফিরিয়েই আনলো। ফের নাচতে নাচতে বাঘা মঠে উপস্থিত। স্বামীজি এবার বাঘাকে দেখে হেসে ফেললেন। জিজ্ঞাসা করলেন, "এবার কি ব্যাপার ?" সব শুনে শেষে বললেন " আর তাড়াতে হবে না যা !" এই বাঘাই স্বামীজির বিশিষ্ট অতিথিদের বেলুরমঠের গেট থেকে সাদর অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসতো।
তথ্য সংগ্রহ: আগন্তুক ম্যাগাজিন