যেমন পণ্ডিত, তেমন অর্থনীতিবিদ আচার্য চাণক্য। ভারতভূমির শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষদের অন্যতম তিনি। তাঁর লেখা নীতিকথা বর্তমান সময়েও প্রযোজ্য। তিনি যে সব নীতিকথা লিখে গিয়েছেন তা মেনে চললে জীবনে সহজে সফল হওয়া সম্ভব। চাণক্য নীতি গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায়ের অষ্টাদশ শ্লোকে বলা হয়েছে, ৬টি বিষয়ে পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা করে নজর দেওয়া দরকার। আচার্য চাণক্য বলেছেন যে বেশিরভাগ পুরুষ এবং মহিলা এই বিষয়গুলি উপেক্ষা করেন। সমস্যায় পড়েন। আর সাফল্য দূরে সরে যায়। তাই এই ৬টি কথা মাথায় রাখলে প্রতিটি কাজেই সাফল্য পাওয়া যায়। বিবাদ ও অর্থের ক্ষতিও এড়ানো সম্ভব। পরিবারে সুখ বাড়ে।
চাণক্য বলেছেন অষ্টাদশ শ্লোকে বলেছেন,'কঃ কালঃ কানি মিত্রাণি কো দেশঃ কৈ ব্যায়াগমঃ। কস্যহন্ড কা চ মে শক্তিরিতি চিন্ত্য মুহুর্মুহুঃ।' যার অর্থ- চাণক্য এই শ্লোকে বলেছেন যে আমাদের কাজে সাফল্য পেতে হলে ৬টি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। সাধারণত জ্ঞানী ব্যক্তিরা এই ৬টি বিষয় মাথায় রেখে কাজ করেন। আচার্য চাণক্য বলেছেন যে একমাত্র সেই ব্যক্তিই বুদ্ধিমান এবং সফল, যিনি সবসময় ৬ প্রশ্নের উত্তর জানেন।
সময়জ্ঞান- একজন জ্ঞানী মানুষ জানেন তাঁর বর্তমান সময় কেমন যাচ্ছে। এখন সুখের বা দুঃখের দিন। সেই ভিত্তিতেই কাজ করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাঁর সময়ের নিক্তিতে তুল্যমূল্য বিচার করে।
শত্রু ও বন্ধু চেনা- আমাদের জানা উচিত কারা আমাদের প্রকৃত বন্ধু আর কারা বন্ধুর ছদ্মবেশে শত্রু! বন্ধুর ছদ্মবেশে শত্রুকে চিনতে পারাটা খুবই জরুরি। বন্ধুদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শত্রুকে চিনতে না পারলে আপনার সব কাজে ব্যর্থতা আসবে।
পরিবেশ-পরিস্থিতির জ্ঞান- এই দেশটি কেমন, অর্থাৎ আমরা যেখানে কাজ করি সেই জায়গা, শহর এবং সেখানকার অবস্থা তার সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। ধরুন নতুন চাকরিতে গেলেন। সেখানে গিয়েই আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে নিতে হবে। দেখে নিতে হবে মানুষ কীভাবে কাজ করছে? এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে কাজ করলে ব্যর্থতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
আয়-ব্যয়ের জ্ঞান- একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি নিজের আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য রাখেন। আয় দেখেই তিনি ব্যয় করেন। আয়ের চেয়ে কম ব্যয় করলে অর্থসঞ্চয় করতে পারেন। জীবনে বড় হতে গেলে আর্থিক ভারসাম্য খুব জরুরি।
কী চাওয়া হচ্ছে- যে অফিসে কাজ করছেন, সেখানকার ম্যানেজার,ঊর্ধ্বতন কর্তা আপনার থেকে কী চাইছে, সেটা মাথায় রাখুন। আমাদের উচিত এমনভাবে কাজ করা যাতে প্রতিষ্ঠানের উপকার হয়। প্রতিষ্ঠান উপকৃত হলে কর্মীরাও লাভবান হন।
নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান- এই শেষ জিনিসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলের জানা উচিত আমরা কী করতে পারি। শুধু সেই কাজ হাতে নিতে হবে, যেটা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা যদি আমাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি কাজ করি তবে ব্যর্থতা নিশ্চিত করে। তাই আমি কতটা পারি, কী পারি সে সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। সবাই সব বিষয়ে পারদর্শী হবে, তা সম্ভব নয়। তাই ব্যক্তি যদি নিজের শক্তি অনুযায়ী কাজ করে তবে তা সাফল্যের পথ সুগম করে।