বন্ধু ছাড়া জীবন চলে না। রক্তের সম্পর্ক তো থাকেই, সেই সঙ্গে জীবনে দরকার বন্ধুও। বন্ধুত্ব হল একমাত্র সম্পর্ক যা মানুষ বেছে নেয়। বন্ধুর সঙ্গে যে সুখ-শান্তি পাওয়া যায়,তা আর কোথাও মেলে না। একটাই শর্ত, প্রকৃত বন্ধু হতে হবে। আজকাল মানুষ বন্ধুত্ব করে নিজেদের স্বার্থে। প্রয়োজনে নিজের স্বার্থপরতার জন্য বন্ধুদের ব্যবহার করার আগে ভেবেও দেখে না। কৃষ্ণ-সুদামার মতো বন্ধুত্ব এখন বিরল। তাই বন্ধুদের পরীক্ষা করে দেখা খুবই দরকার। স্বার্থপর বন্ধুদের আগেভাগে চিনে ফেলতে হবে। শুধু একসঙ্গে পার্টি করা বা বেড়াতে যাওয়াই বন্ধুত্ব নয়!
সর্বকালের সেরা কূটনীতিবিদ আচার্য চাণক্য তাঁর নীতিশাস্ত্রে বন্ধুত্ব নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। কেমন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন না এবং কীভাবে একজন প্রকৃত বন্ধুকে চিনতে হবে, সে সম্পর্কে লিখে গিয়েছেন চাণক্য। চাণক্য নীতি পড়লেই সঠিক বন্ধু চেনার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
দুমুখো বন্ধু- এমন বন্ধুদের থেকে দূরে থাকুন যাঁরা মুখে আপনার প্রশংসা করে কিন্তু অন্যের সামনে আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলে। যাঁরা এমনটা করে তাঁরা প্রয়োজনে আপনাকে বিপদে ফেলে দেওয়ার আগেও চিন্তা করে না। সত্যিকারের বন্ধু সে-ই,যে আপনার ভুলটা মুখের উপর বলার সাহস রাখে। অন্যের কাছ থেকে আপনার নামে খারাপ কথা শোনে না।
একে-ওকে বলা কথা- যাঁরা গসিপ করতে পছন্দ করে তাঁরা কারও আত্মীয় নয়। যে ব্যক্তি অন্য কারওর গোপন করা আপনাকে বলছে, সে আপনার কথা অন্যকেও বলতে পারে। এই ধরনের লোকদের কাছে কোনও গোপন কথা বলা উচিত নয়। তাঁরা সেটাও অন্য কাউকে বলতে পারে। যা আপনাকে সমস্যায় ফেলবে।
সংকটের সময় বন্ধু চেনা- প্রিয়জনের আসল পরিচয় মেলে কেবল সংকটের সময়ে। সুখের সময়ে সবাই পাশে থাকে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনের সময় কোনও বন্ধু পাশে না থাকলে সে প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। এই সব বন্ধুদের থেকে সাবধান! এমন মানুষ জীবনে ভিড়ের মতো, যাঁরা আসে যায়।
বিপরীত প্রকৃতি- দুটি ভিন্ন মেরুর ব্যক্তি কখনও বন্ধু হতে পারে না। আর্চার্য চাণক্য বলেছেন,সাপ-বেজি, ছাগল-বাঘ, হাতি-পিঁপড়ে, সিংহ-কুকুর যেমন বন্ধু হতে পারে না, তেমনি বিপরীত প্রকৃতির ব্যক্তির থেকেও দূরে থাকা উচিত। ভিন্ন মেরুর বন্ধু ভাল ব্যবহার করলেও ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। কোনও না কোনও সময় তাঁর স্বভাবের প্রতিফলন ঘটবেই। তাই ভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব একেবারে নয়।