scorecardresearch
 

EXCLUSIVE: করোনা, ফুসফুসের ক্যান্সার; তবু লড়াইয়ে জয়ী অন্তর্যামী!

এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদেরও রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এই নভেম্বর ফুসফুসে ক্যান্সারের সচেতনতার মাস হিসাবে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে। অন্তর্যামী হোতার এই ঘটনা এই সচেতনতার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ!

Advertisement
করোনা ও ফুসফুসের ক্যান্সারকে হারিয়ে এখন সুস্থ অন্তর্যামী হোতা। করোনা ও ফুসফুসের ক্যান্সারকে হারিয়ে এখন সুস্থ অন্তর্যামী হোতা।
হাইলাইটস
  • করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন প্রতিবেশি রাজ্য ওড়িষার সম্বলপুরের বাসিন্দা ৫৭ বছরের অন্তর্যামী হোতা।
  • হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিন তিনেক পর চিকিৎসকরা জানান, শুধু করোনা নয়, প্রৌঢ়ের ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সারও!
  • ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আপাতত সম্বলপুরের সখী গোপীনাথ পাড়ার বাড়িতে ফিয়ে গিয়েছেন অন্তর্যামীবাবু।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন প্রতিবেশি রাজ্য ওড়িষার সম্বলপুরের বাসিন্দা ৫৭ বছরের অন্তর্যামী হোতা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিন তিনেক পর চিকিৎসকরা জানান, শুধু করোনা নয়, প্রৌঢ়ের ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সারও!

খবর শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে! রোগীর বাঁচার আশা কতটা? আশঙ্কায়, দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে তাঁর পরিবারের। সেটাই তো স্বাভাবিক! কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে, যত রকম ক্যান্সারের কথা আমরা জানি, তার মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর! কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে। ফলে তখন রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা ফুসফুসের ক্যান্সারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা নীরব ঘাতক বলে থাকেন।

ফুসফুসে টিউমার শনাক্ত হওয়ার পরই চিকিৎসকরা প্রৌঢ়ের পরিবারকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর দেরি না করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন সম্বলপুরের বাসিন্দা অন্তর্যামী হোতা। বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসক (এমসিএইচ সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট) ডাঃ শুভদীপ চক্রবর্তী এবং ডাঃ তাপস কর প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরীক্ষার পর তাঁর পরিবারকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

এর পর ২ নভেম্বর ফের পরীক্ষা পর জানা যায়, করোনামুক্ত হয়েছেন অন্তর্যামীবাবু। দেরি না করে ৩ নভেম্বরেই অস্ত্রোপচারের জন্য ফের কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৭ বছর বয়সী অন্তর্যামী হোতা। পরের দিনই প্রৌঢ়ের ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করেন ডাঃ শুভদীপ চক্রবর্তী এবং ডাঃ তাপস কর। সফল অস্ত্রোপচারে বাদ পড়েছে ফুসফুসের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারটি। ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আপাতত সম্বলপুরের সখী গোপীনাথ পাড়ার বাড়িতে ফিয়ে গিয়েছেন অন্তর্যামীবাবু। সেখান থেকেই ফোনে তিনি জানান, সেলাই এখনও কাটা হয়নি। এখনও কয়েক প্রস্থ থেরাপি বাকি, চলবে ওষুধপত্রও। তবে এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন তিনি।

Advertisement

কিন্তু কেন বা কী ভাবে অন্তর্যামীবাবুর ফুসফুসে বাসা বাঁধল ক্যান্সার? ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের অভ্যাস কি এর জন্য দায়ি? তিনি জানান, ধূমপান বা কোনও রকম তামাকজাত দ্রব্য সেবনের অভ্যাস কোনও কালেই তাঁর ছিল না। তাহলে কি পরিবারে আগে কেউ কখনও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন? উত্তরে অন্তর্যামীবাবু জানান, তাঁর পরিবারে সম্ভবত তিনিই প্রথম ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। তাহলে কোনও পারিবারিক ইতিহাস বা কোনও রকম তামাকজাত দ্রব্য সেবনের অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বাঁধল!

এ প্রসঙ্গে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসক (এমসিএইচ সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট) ডাঃ শুভদীপ চক্রবর্তী জানান, ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনও ভাবেই ধূমপান করেন না বা কখনও করেননি। ডাঃ চক্রবর্তী জানান, পরোক্ষ ধূমপান সরাসরি ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর! যাঁরা ধুমপায়ীদের আশেপাশে থাকেন ও ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসেন, তাঁদেরও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি। অন্তর্যামীবাবুর ক্ষেত্রেও ঠিক একই ভাবে ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল!

তাহলে কি ফুসফুসের ক্যান্সার অস্ত্রোপচারে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব? উত্তরে ডাঃ চক্রবর্তী জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে। ফলে তখন রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্তর্যামীবাবুর ক্ষেত্রে তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়াটাই তাঁকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল। কারণ, দ্বিতীয় পর্যায়েই ধরে পড়ে তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার। ফলে অস্ত্রোপচারে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারটি সফলভাবে বাদ দেওয়া গিয়েছে। তাই এখন প্রায় বিপন্মুক্ত অন্তর্যামী হোতা।

“অন্তর্যামী হোতার এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদেরও রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এই নভেম্বর ফুসফুসে ক্যান্সারের সচেতনতার মাস হিসাবে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে। অন্তর্যামী হোতার এই ঘটনা এই সচেতনতার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ! একই সঙ্গে এ রাজ্যে ক্যান্সারের চিকিৎসারে ক্ষেত্রেও এটি একটি নজিরবিহীন সাফল্য”, বলেন ডাঃ চক্রবর্তী।
 

 

Advertisement