জীবনের সারমর্ম গীতায় রয়েছে। মহাভারতের যুদ্ধে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলেন অর্জুন। পরিজনদের বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ করবেন, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। অর্জুনের রথে ছিলেন শ্রী কৃষ্ণ। যুদ্ধ,জয়-পরাজয়, জীবনৃমৃত্যু, ক্রোধ ইত্যাদির মধ্যে আবৃষ্ট রথারূঢ়কে জীবনের পথ দেখিয়েছিলেন মাধব। গাণ্ডীব ফেলে দিয়েছিলেন অর্জুন। শ্রী কৃষ্ণের কথায় অর্জুন জয়ের পথ দেখেন। সব কিছু ভুলে মনকে যুদ্ধে নিয়োজিত করেন। এখন অনেকেই বলেন, দুনিয়ার সর্বোত্তম 'মোটিভেশনাল স্পিকার' শ্রী কৃষ্ণ। তাঁর কথাই রয়েছে গীতায়। স্থিতধী হওয়ার পাঠ দিয়েছেন কৃষ্ণ। গীতা আসলে দর্শন। যে দর্শন বলে, জীবনে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। যে দর্শন বলে, সুখ-দুঃখ আসলে মায়া। এর বাইরে বেরিয়ে জীবনকে দেখতে হবে। ক্রোধই মানুষের বুদ্ধিগ্রাস করে। গীতার কথা যদি আয়ত্ত করে ফেলতে পারেন কোনওদিন পরাজয় হবে না।
১। রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ - 'রাগে মতিভ্রম হয়। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ওঠে। তখন তাঁর বুদ্ধি কাজ করে না। যুক্তি নষ্ট হয়ে যায়। তাই রাগ এড়ান উচিত। রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই জীবনে সাফল্য নিশ্চিত।
২। দৃষ্টিকোণ- যে জ্ঞানী ব্যক্তি জ্ঞান ও কর্মকে এক হিসাবে দেখেন, তার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক। জ্ঞানার্জনই সব নয়। তার সঙ্গে জড়িত কর্মও। কর্মের মাধ্যমেই মানুষ জীবনে এগিয়ে যান।
৩। মনকে নিয়ন্ত্রণ- যাঁরা মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন না,তাঁদের জন্য তা শত্রুর মতো কাজ করে। মনকে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। জীবনে উন্নতি করতে গেলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। মনের উপর দখল থাকলে চট করে কেউ ভেঙে পড়ে না। সুখ-দুঃখকে সমান জ্ঞান করে এগিয়ে যান।
৪। আত্মজ্ঞান- নিজের দুর্বলতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে জানা উচিত। নিজের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকলে বাইরের লোকের কথায় প্রভাবিত হবেন না। 'আত্মজ্ঞানের তরবারি দিয়ে অন্তর থেকে অজ্ঞানতার সংশয় ঝেড়ে ফেলুন। শৃঙ্খলাবদ্ধ হন।
৫। নিজেকে তৈরি- মানুষ নিজের বিশ্বাসে তৈরি হয়। সে যেমন বিশ্বাস করে, তেমনটাই ঘটে। তাই কোনও লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে আগে নিজেকে তৈরি করতে হবে।
৬। কর্মের ফল- প্রতিটি কর্মের ফল থাকে। এ জীবনে কিছুই হারায় না, নষ্ট হয় না। তাই জীবনে সব কাজের ফল পেতে তৈরি থাকুন।
৭। অনুশীলন অপরিহার্য -মন অস্থির এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, তবে অনুশীলনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস করুন।
৮। ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা- একজন মানুষ যা ইচ্ছা তাই হতে পারে, যদি সে অবিরত আত্মবিশ্বাসের সাথে কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেতে কর্ম করে চলে।
৯। মানসিক চাপ দূর করুন - মনকে বশে রাখা দরকার। জীবনে ভেঙে পড়লে চলবে না। সুখ-দুঃখ আসতে থাকবে।
১০। ফলের প্রত্যাশা নয়- কখনও ফলের প্রত্যাশা করে কর্ম করবেন না। ফলের প্রত্যাশাই হল সবচেয়ে সমস্যা। কারণ মনের মতো ফল না এলে ব্যক্তি ভেঙে পড়েন। আবার ফল প্রত্যাশিত এলেও অতিরিক্ত খুশি প্রকাশ করার দরকার নেই। ফল যেমনই হোক, স্বাভাবিক থাকুন। স্থিতধী হোন আপনি।