মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে থাকতে গেলে নানা কথা বলতে হয়। সুখ-দুঃখ সবাই পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিই। তবে সব কথা সবাইকে বলা যায় না। অথচ অজান্তেই আমরা কারও বডি শেমিং করে ফেলি, কারও আবার ব্যক্তিগত বিষয়ে অনাধিকার চর্চা করি। যা একেবারেই অনুচিত। এমন অনেকগুলি বিষয় যা কাউকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। এমন পরিস্থিতি কখনও তৈরি করা উচিত নয়। তা অন্যকে আঘাত দেয়। বিবেকসম্পন্ন মানুষ এই সব প্রশ্ন এড়িয়ে চলেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন প্রশ্ন কাউকে করতে নেই।
বিয়ে করছেন কবে?- বিয়ে সমাজের প্রচলিত রীতি। তবে তার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। সবাইকে যে ৩০ বছর বয়সের আগেই বিয়ে করতে হবে এর কোনও মানে নেই। তা বলে কাউকে জিজ্ঞাসা করা, কবে বিয়ে করছেন? এটা একেবারেই অনুচিত। তিনি বিয়ে করলে আপনি জানতে পারবেন। অতিরিক্ত উৎসাহ দেখানোটা অভদ্রতা। তাই ছোটবড় কারও কাছে বিয়ের কবে করছেন সে কথা জানতে চাইবেন না। কে, কখন বিয়ে করবেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখনও অবিবাহিত নারীকে বেশি এই সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তাঁর মা-বাবাও রেহাই পান না। হতে পারে সেই নারী কেরিয়ার গড়তে চাইছেন। তাঁকে তাঁর মতো করে থাকতে দিন। প্রশ্ন করে নিজেকে অভদ্র ও অন্যকে নিজের থাকতে দিন।
বাচ্চা কবে নিচ্ছেন? নবদম্পতি বা অনেক দিন বিয়ে গেলে এই প্রশ্নটা খুব কমন। ছোটবড় সকলেই হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করে ফেলেন, কীরে মা-বাবা হবি কবে? কীরে বাচ্চা নিচ্ছিস না কেন? আচ্ছা, যাঁরা বিয়ে করেছেন তাঁরাই ঠিক করুন না। তাঁদের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনায় আপনার এতো মাথাব্যথা কেন বাপু? আপনি তো আর সেই সন্তানকে লালনপালন করে বড় করবেন না? হতে পারে তাঁরা কোনও শারীরিক বা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। হতে পারে তাঁরা জীবনকে উপভোগ করতে চান। উটকো প্রশ্ন করে তাঁদের মানসিক আঘাত করবেন না।
সংসার ভাঙল কেন? টেকাতে পারলি না? কারও বিবাহ বিচ্ছেদ হলেই এই সব প্রশ্ন মুখের উপর করে ফেলেন অনেকে। এতে সেই ব্যক্তি মানসিক আঘাত পেতে পারেন। কারও ডিভোর্স হয়েছে মানেই পৃথিবী ভেঙে পড়েনি! দুটো মানুষ একসঙ্গে থাকতে চাননি, এই কারণেই বিচ্ছেদ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই সব ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কষ্ট পেতে পারেন।
কোথায় চাকরি করিস বা বেতন কত? কেউ নতুন চাকরি পেল, বা চাকরি করেন, অনেকেই বেতন জিজ্ঞেস করে ফেলেন। এটা কিন্তু একদম অনুচিত। পুরুষ হোক বা নারী কারও মাইনের কথা জিজ্ঞেস করবেন না। চাকরির খোঁজখবর নিতেই পারেন।কিন্তু বেতন জানতে চাওয়াটা অভদ্রতা।
এতদিন পড়াশুনো করে কী লাভ হল? বহু মানুষ চাকরি বা ব্যবসা করেন না। আঁকা, অনলাইন কাজ বা লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই বলে ফেলেন, এত পড়ে লাভ কী হল একটা চাকরি জোটাতে পারলি না? কে, কী করবে, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।
সংসারে অশান্তি লাগানোর কথা- অনেক সময় ছেলে আলাদা থাকলে লোকে মা-বাবাকে সমবেদনা দেখাতে গিয়ে উটকো কথা বলে ফেলে। এই যেমন তুমি এখানে কষ্ট আছো আর শহরে ছেলে বউকে নিয়ে তো বেশ মজায়। এই ধরনের কথা বলবেন না।
বডি শেমিং- কীরে এত মোটা হলি কেন? কীরে দিন দিন তো শুকিয়ে যাচ্ছিস? কাউকে দেখে শারীরিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করবেন না। হতেই পারে তিনি কোনও অসুখ বা মানসিচ চাপে আক্রান্ত। এই সব প্রশ্ন তাঁকে বিব্রত করতে পারে। কারও সঙ্গে কারও তুলনা করবেন না। ওর ছেলে ভাল করল, তোর ছেলেটার দ্বারা হল না, বা ওর মেয়ে বিদেশে চলে গেল, তুই পারলি না! শিশুর পড়াশোনা নিয়ে কোনও নেতিবাচক প্রশ্ন একদম করবেন না।