অনেকেরই অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস থাকে, আর সেই কারণে হতে পারে নানাবিধ সমস্যা। কেউ কাজের তাগিদে আবার কেউ বা নেহাতই অভ্যাসের কারণে অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। অনেকে আবার মোবাইলে সিরিজ বা সিনেমা দেখতে দেখতে রাত কাটিয়ে দেন। কিন্তু অজান্তেই যে এটা আপনার কতটা ক্ষতি করছে তা নিজেও জানেন না আপনি। মাঝেমধ্যে দু'একদিন রাত জাগলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে একটানা দীর্ঘদিন রাত জাগলে ভয়াবহ শরীরিক ক্ষতি হতে পারে।
রাত জাগলে সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব কাজ করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আলস্য কাজ করে, ব্যায়ামের ইচ্ছে থাকে না। ফলে ওজন বাড়তে পারে। এ ছাড়া অন্য রোগ থাকলে ও বয়স বেশি হলে রোগের প্রকোপ বাড়ে। শরীরের নির্দিষ্ট কয়েকটি চক্র রয়েছে, রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকার অভ্যাস তৈরি করলে সেই চক্রের ক্ষতি হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী সমস্যা হতে পারে।
সেরাটোনিন নিঃসরণ হয় না
রাতে সেরাটোনিন হরমোনের প্রভাব শরীরে বাড়ে। এই হরমোন মনকে শান্ত করে ঘুমে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি রাত জাগলে সেই হরমোনের ওফর প্রভাব পড়ে। এর ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী কোনও সমস্যা হতে পারে। রাত ১২টা থেকে তিনটের মধ্যে না ঘুমোলে শরীরে সেরোটোনিন নিঃসরণ কমে যায়।
আরও পড়ুন: Sleeping Tips: বাম নাকি ডান, কোন পাশ ফিরে ঘুমোলে ঠিক থাকবে স্বাস্থ্য?
রক্তচাপ বাড়ে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে টানা ২-৩ দিন রাতে ঠিক মত না ঘুমুলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে, তার প্রভাবে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আর এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত যদি ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা না যায়, তাহলে শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
ওজন বাড়ে
২০১৪ সালে হওয়া একটি স্টাডিতে দেখা গেছে টানা কয়েকদিন ৬ ঘণ্টার থেকে কম সময় ঘুমোলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কারণ ঘুম কম হলে স্বাভাবিকভাবেই খিদে বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: Sleeping on Stomach: শিরদাঁড়ায় ব্যথা কমছেই না? ঘুমের সময় পেটে চাপ পড়ছে কিনা খেয়াল করুন...
মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে
আমরা যখন ঘুমেই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক নিজেকে রিজুভিনেট ও রিচার্জ করতে থাকে। সেই সঙ্গে সারা দিন ধরে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এবং তথ্য ব্রেনে স্টোর করার কাজটাও এই সময় ঘটে থাকে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে প্রথমেই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার কারণে মনোযোগ এবং বুদ্ধি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলিও ঘটে থাকে।
মানসিক অবসাদ
২০০৫ সালে হওয়ার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই হাজারো চাপের মাঝেও মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না যেন!