দেখতে শুষ্কং কাষ্ঠং। গাছের শুকিয়ে যাওয়া ডালের মতো। রান্নায় পড়লে শুকনো ডাঁটার মতো। কিন্তু স্বাদে ‘শুষ্ক’ তো নয়ই বরং একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে হবে এমনই তার স্বাদ। চুইঝাল দিয়ে কষা মুরগি বা খাসি যে একবার খেয়েছে তার পক্ষে এই স্বাদ ভোলা মুশকিল। বাংলাদেশের রান্নায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এই মশলা। এখন এপার বাংলাতেও চুইঝালের কদর বাড়ছে। কিন্তু চুইঝাল আসলে কী?
চুইঝাল এক ধরনের মশলা। এপার বাংলা, কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে যদিও চুইঝাল ঘরে ঘরে পরিচিত নয়, কিন্তু ‘বাঙাল বাড়ির’ হেঁশেলে চুইঝাল বহুল পরিচিত এক মশলা। বাংলাদেশে তার আসল রাজত্ব। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এলাকায় চুইঝাল মসলা খুব জনপ্রিয়। তবে সাতক্ষীরা এবং খুলনায় সবচেয়ে ভালো চুই উৎপাদন হয়। হেঁশেলে লঙ্কার বিকল্প হিসেবে রান্নায় চুইঝাল ব্যবহার করা হয়। ঝালের বদলে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। চুই আসলে এক ধরনের লতা। কাণ্ড ধূসর। পাতার আকার অনেকটা পান পাতার মতো। গাঢ় সবুজ রংয়ের।
চুইঝালের মূল স্বাদ ঝাল। রান্নায় ব্যবহারের জন্য পরিচিত হলেও এতে আছে একাধিক ঔষধি গুণ। চুইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল-ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এই চুইঝালের উপকারিতা একাধিক। দেখে নিন চুইঝালে কী কী গুণ রয়েছে।
-চুইঝালের সবচেয়ে বড় উপকারিতা যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের সেই সমস্যা দূর করে। যাদের গিটে গিটে ব্যথা হয় তাদের সেই ব্যথা দূর করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
-চুইঝালে আছে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
-দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ দূর করে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
-স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা কমায়।
-ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
-অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে চুইঝাল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।
-চুইঝালের কান্ড ব্যবহার হয় মশলা হিসেবে। মাছ, মাংসের মতো আমিষ রান্নায় কান্ড ছোট ছোট করে কেটে দেওয়া হয়। খেতে হয় ডাঁটার মতো করেই। চুইঝাল বেশ দামী মশলা। তবে অনেকদিন পর্যন্ত এই মশলাকে রাখা যায় না।