scorecardresearch
 

Woman Reservation Bill: মহিলা সংরক্ষণ বিল: সাধুবাদ জানাবো, কিন্তু 'সাধু সাবধান'ও বলব

আজ প্রথম জিজ্ঞাসা , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলা সংরক্ষণ বিল হঠাৎ বিশেষ অধিবেশন তলব করে কেন আনলেন? আর আনলেনই যখন তখন সত্যি সত্যিই কি নারীরা আমাদের দেশে আপন ভাগ্য জয় করিবার পাবে সেই অধীকার?

Advertisement
মহিলা সংরক্ষণ বিল মহিলা সংরক্ষণ বিল

আমি জয়ন্ত ঘোষাল বলছি। 
আমার মনে অনেক জিজ্ঞাসা। একেক দিন একেক রকমের জিজ্ঞাসা হিং-টিং-ছট প্রশ্নের মতো আমার মাথার মধ্যে কামড়ায়। আমি সেই জিজ্ঞাসা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি সমুখ পানে। নানান মানুষের সঙ্গে কথা বলি - রাজনেতা ,আমলা , সাংবাদিক , আত্মীয়-স্বজন , বন্ধু-পরিজন। তারপর উত্তর খুঁজি। আর সেই উত্তর নিয়ে এখন হাজির হব আপনাদের কাছে। আজ 'জয়ন্তর জিজ্ঞাসা'র পথচলা শুরু।

আজ প্রথম জিজ্ঞাসা , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলা সংরক্ষণ বিল হঠাৎ বিশেষ অধিবেশন তলব করে কেন আনলেন? আর আনলেনই যখন তখন সত্যি সত্যিই কি নারীরা আমাদের দেশে আপন ভাগ্য জয় করিবার পাবে সেই অধীকার?

প্রয়াত সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর কথা আপনারা  শুনেছেন। হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের গল্প কে না জানে। কিন্তু শিবরাম চক্রবর্তী যুবক বয়সে অনেক সিরিয়াস প্রবন্ধ রচনাও করেছেন। তাঁর বিখ্যাত একটি প্রবন্ধের বই ' মস্কো বনাম পন্ডিচেরী'। সেই বইটিতে মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি একটা অসাধারণ উপমা দিয়েছিলেন। আজও সেই উপমাটা আমি ভুলতে পারি না। 'শিব্রাম চকর বকর ' লিখেছিলেন যে , মেয়েদের আমরা প্রথমে পা দুটো খোঁড়া করে দিই। তারপর তাদের কাঁধে তুলে নিয়ে আমরা ঘুরে বেড়াই। আর 'মা জগদম্বে ...... মা জগদম্বে' বলে গগন ভেদী আত্মরব তুলি। অর্থাৎ আমরা মেয়েদেরকে আর্থিক স্বাধীনতা দিই না। কিন্তু তাকে আমরা মায়ের জাত , মা চন্ডী , মা দুর্গার জাত বলে অনেক সম্মান ঘোষণা করি। আসলে সমাজ ব্যবস্থাটা না বদলালে ঘুণ ধরা দেওয়ালে মহিলা সংরক্ষণ বিলও কি চুনকামের সামিল হবে? আর সেই চুনকামে আসলে মহিলা সংরক্ষণ প্রকৃত রূপ পাবে না , এ এক মস্ত বড় জিজ্ঞাসা। সংসদে , সংসদের বাইরে অনেকের সঙ্গে কথা বললাম। যেটা মনে হল এখন আপনাদের বলি।

Advertisement

'নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম' এবারের মহিলা সংরক্ষণ বিলের এটাই নাম । নামের মধ্যেও একটা সনাতনী ভাবাদর্শ রাখা হয়েছে।  কোনও সন্দেহ নেই যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই বিলটা লোকসভায় পাস করতে কোনও অসুবিধাই হল না। কংগ্রেস-সহ , তৃনমূল এবং বিভিন্ন দল সমর্থনও করল। কার্যত বলা যেতে পারে সর্বসম্মতিক্রমে বিলটা পাস হয়েছে। এই বিলটা অতীতেও বারবার আনার চেষ্টা হয়েছে, এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় বারবার বলেছেন । অটল বিহারী বাজপেয়ী তো বহুবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিল পাস করা যায়নি লোকসভাতে। মনমোহন সিং রাজ্যসভায় এই বিল পাস করিয়েও লোকসভায় পাস করাতে পারেননি।। সেই সময় মুলায়ম সিংহ যাদব , লালু প্রসাদ যাদব তাঁরা কোটার মধ্যে কোটা আনার কথা বলেন। তাঁরা বলেন যে মহিলা সংরক্ষণ দিতে গিয়ে সম্প্রদায়ের যে সংরক্ষণ পাওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না। সুতরাং যাদব মহিলাদের ব্যপারে একটা বাদ-বিচার করতে হবে তা না হলে বিল সমর্থন করা যাবে না। তাহলে পরিস্থিতিটা জটিল থেকে জটিলতর হয় এবং বিল পাস করা যায়নি। এনডিএ সরকারে বিজেপিরই সদস্য সংখ্যা  ৩০৩। বিজেপির নেতারাই ঠাট্টা করে বলে 'থ্রী নট থ্রী রাইফেলের মতো ' বিজেপি। সুতরাং পাস করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। সুতরাং পাস করানোটা ব্যাপার নয়। নরেন্দ্র মোদির সদিচ্ছা নিয়েও আমি কোনও প্রশ্ন তুলছি না। আমার জিজ্ঞাসা নরেন্দ্র মোদির সদিচ্ছা নিয়ে নয়। কিন্তু আমার জিজ্ঞাসাটা হচ্ছে এটা বাস্তবে রূপ দিতে গেলে একটা টেকনিক্যাল ব্যাপার আছে। প্রথমে জনগণনা করতে হবে। ২০০১ সাল থেকে নতুন করে জনগণনা হয়নি। ভোটের দামামা বেজে গেছে ,মে মাসের মধ্যেই ভোট হয়ে যাবে। তাহলে জনগণনা হবে তারপর। জনগণনা একটা বিরাট প্রক্রিয়া ১৪০ কোটি মানুষের দেশে । তারপর হবে নির্বাচন কেন্দ্রের ডি-লিমিটেশন। অর্থাৎ মেয়েদের রাজনীতিতে  ৩৩ শতাংশ মনোনয়ন দিতে গেলে সেগুলো কোন আসন হবে সেটা নিয়েও একটা প্রশ্ন থাকবে। সুতরাং এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। ২০২৯ সালে হয়তো গিয়ে সেটা যদি হয় খুব ভালো। কিন্তু এর আগেও পঞ্চায়েত, পুরসভায় নানান স্তরে মেয়েদের ৩৩ শতাংশ আসন দেওয়ার কথা হয়েছে।

কিন্তু জয়ন্তর জিজ্ঞাসাটা অন্য জায়গায়। জয়ন্তর জিজ্ঞাসা হচ্ছে, যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই এই বিল আনার চেষ্টা করতে পারতেন। যেহেতু এই বিল আনার বিষয়টা ইস্তাহারে  ছিল। সেটা তিনি করেননি। ২০১৯-এ যেতার পরেও মোদী সরকার করেনি। তাহলে এখন যখন ভোটের মাত্র ৭ মাস বাকি আছে তখন আনার প্রয়োজন কী? তাও আবার বিশেষ অধিবেশন ডেকে। তার মানে ভোটের বার্তা দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। তা বেশ কথা। আমি তো সাধুবাদ জানাবো নরেন্দ্র মোদীকে, তিনি এনেছেন বলে। কিন্তু সাধু সাবধান-ও বলব। মন্ত্রিসভাতে ক'জন মহিলা মন্ত্রী রয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে ক'জন মহিলা মন্ত্রী রয়েছেন? পুরসভাতে কটা মহিলা চেয়ার পার্সন আছেন? সেই তুলনায় তো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর রাজ্যে সব থেকে বেশি মহিলা প্রতিনিধি আছে সাংসদদের মধ্যে , এমএলএ-দের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের তৃণমূল কংগ্রেসের যে প্রতিনিধিত্ব সেটা অনেক বেশি। মহিলাদের জন্য থানা পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ,মহিলা থানা। নরেন্দ্র মোদীর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না জয়ন্ত। জয়ন্তর জিজ্ঞাসা বাস্তবে সমাজে এটা সত্যি সত্যিই কি রূপ পাবে?

Advertisement