পশ্চিমবাংলার হিংসা কবলিত রাজনীতি প্রমাণিত হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মাধ্যমে। আদালত আদেশ দিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হোক। যে নির্দেশ প্রমাণ করে পশ্চিমবঙ্গে হিংসার রাজনীতি বিদ্যমান। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন। গত ৫৯ বছরে হাজার হাজার মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন এই হিংসার রাজনীতিতে। হিংসা ঘটনার তখন ঊর্ধ্বমুখী হয় যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। ক্ষমতায ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয় কোনও দল। অথবা কোনও দল ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। দুই দলের সংঘাতে হিংসা ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি হয়।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল আপ্রাণ চেষ্টা করছে যাতে অন্তত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পঞ্চায়েত নির্বাচন করা যায়। যেমন আসানসোলে বিরোধী প্রার্থী যখন বিডিও অফিসে মনোনয়ন দাখিলে এসেছেন তাঁদের গোলাপ ফুল দেওয়া হয়েছে।। বীরভূমে অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে কাজল শেখ বিরোধীদের মনোনয়ন দাখিলে যাতে কোনও বাধা না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। তেমনই আবার এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নতুন নতুন হাতিয়ারের উদ্ভবও ঘটছে। আচমকা বেড়ে গিয়েছে উইকেটের বিক্রি। শুধু তৃণমূল, বিজেপি নয়, সিপিএমের লোকেরাও নাকি কিনছেন উইকেট। সেই উইকেট দিয়েই মারামারি ছবি দেখা গিয়েছে সংবাদমাধ্যমে।
এবার নির্বাচনের পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তৃণমূলের আপ্রাণ চেষ্টা করছে, হিংসার রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরত্ব রাখতে। কারণ, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসায় বলি হয়েছিলেন ২৭ জন। তার প্রভাব পড়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। সেবার বিজেপি হঠাৎ করে ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি পেয়েছিল। আসলে হিংসার প্রতিবাদ হিসেবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা ভেবেছিলেন যে তৃণমূলকে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া উচিত। এই হিংসার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল লোকসভা ভোট।
দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন,কোনওরকম হিংসা করা যাবে না। যদি তৃণমূলের ঘাড়ে হিংসার দায় চাপে তাহলে দলের প্রতি মানুষের বিশ্বাস টলে যাবে। মনোনয়ন দাখিলের সময় হিংসা হয় বাংলায়। এবার জেলায় জেলায় সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। উদ্দেশ্য, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেন কমে। তার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের উপরে মানুষের আস্থা কমেছে।
পঞ্চায়েত ভোটে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির প্রার্থীরা সবথেকে বেশি মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তার পর রয়েছে সিপিএম। বাম দলের পর কংগ্রেস। হিংসার রাজনীতি যে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতি করতে পারে সেই আশঙ্কায় রাশ টানার চেষ্টা চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।