পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের টানাপোড়েন অব্যাহত। এই আবহে শুক্রবার বিহারের পটনায় নীতীশের ডাকা বৈঠকে বসছেন বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীরা। উদ্দেশ্য, লোকসভা ভোটের আগে ঐকমত্য তৈরি। জানা গিয়েছে,পটনায় বিরোধী বৈঠকে মমতার সঙ্গে হবেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে থাকার কথা রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গের। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে রাজ্যের প্রেক্ষাপটে।
গত ২৪ এপ্রিল নবান্নে এসেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী। নীতীশকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছিলেন,'বিহার থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বিরোধী দলের বৈঠক ডাকুন।'সেই মতো জুনের গোড়ায় বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন নীতীশ কুমার। সেই বৈঠক পিছিয়ে যায় ২৩ জুনে। সূত্রের খবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকায় আগের বৈঠকে থাকতে পারতেন না রাহুল গান্ধী। সেজন্য তারিখ পিছনো হয়।
বিরোধী দলগুলির মধ্যে এখন সব ঠিকঠাক আছে এমনটা বলা যায় না! রাজস্থানে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। ফলে ভোট কাটাকাটির অঙ্কে লাভবান হতে পারে বিজেপি। আপের বিরুদ্ধে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মধ্যপ্রদেশেও একই ঘটনা। আবার পশ্চিমবঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার বিরোধ সর্বজনবিদিত। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে তা আরও তীব্র হয়েছে। বায়রন বিশ্বাসকে দলে নিয়ে 'কংগ্রেস ভাঙা'র অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এছাড়াও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, পিডিপি সুপ্রিমো মেহবুবা মুফতি এবং বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং ডি রাজারও এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা।
এমতাবস্থায় বিরোধী বৈঠকে মমতা-রাহুলকে একমঞ্চে দেখা গেলে প্রদেশ কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে মত অনেকের। আবার সীতারাম ইয়েচুরিও থাকতে পারেন বৈঠকে। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়বে সিপিএম-ও। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পরই জোটের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মমতা।
বিরোধী জোটে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল একমঞ্চে থাকায় কি ফায়দা পাবে বিজেপি? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজ্যের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে বিজেপির হাতে উঠে আসবে বড় হাতিয়ার। গেরুয়া শিবিরের নেতারা প্রচারের সুযোগ পেয়ে যাবেন, আসল বিরোধী বিজেপিই। কংগ্রেস ও তৃণমূল তলায় তলায় মিলে রয়েছে।
সবমিলিয়ে, বিরোধী শিবিরের বৈঠকের দিকে চোখ গোটা দেশের। ১৯৭৭ সালে বিহারের পটনা থেকে কংগ্রেস বিরোধী জোটের সূচনা করেছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। সেখান থেকেই কি যাত্রা শুরু করবে মোদী বিরোধী জোট?