Centuries-old Route 52 and Number 56 Wooden Bus: হাওড়ার রামরাজাতলা থেকে যাত্রী নিয়ে এই রুটে বাসের যাত্রা শুরু হয় প্রায় একশো বছর আগে, ১৯২৪ সালে। কোনও সিন্ডিকেট থেকে নয়, এই রুটে গণপরিবহণের উদ্দেশ্যে ৫২ নম্বর রুট চালু করে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত সরকার। এটাই পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে পুরনো বাসরুট। যাত্রীদের প্রয়োজন অনুযায়ী হাওড়া রামরাজাতলা ছাড়িয়ে এই রুট দীর্ঘ হতে থাকে একটু একটু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ৫২ নম্বর রুটের দৈর্ঘ্য বাড়লেও গণপরিবহণের অন্যান্য বিকল্পের আবির্ভাবে এই রুটের বাসের সংখ্যা এখন মাত্র ১৮-এ এসে ঠেকেছে। পাশাপাশি, হাওড়ার ৫৬ নম্বর রুটে এখনও চলছে দক্ষিণবঙ্গের সম্ভবত একমাত্র কাঠের বাসটি।
মোটামুটি দুই দশক আগে পর্যন্ত এমন কাঠের বাস রাজ্যের প্রায় সর্বত্র দেখা যেত। তারপর অ্যালুমিনিয়াম বডির নতুন ঝাঁ চকচকে বাস নামল শহরের রাজপথে আর বয়সের ভারে ন্যুব্জ কাঠের বাসগুলি একে একে অচল হয়ে পড়ল। রাজ্য বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি) তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৯৫-২০০০ সাল থেকেই একটু একটু করে বসে যেতে শুরু করে রাজ্যের কাঠের তৈরি বাসগুলি। এর পিছনে প্রধানত দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, কাঠের বাস তৈরির খরচ অ্যালুমিনিয়াম বডির বাসের চেয়ে অনেকটাই বেশি। দ্বিতীয়ত, কাঠের বাসের ওজন বেশি হওয়ায় তা চালাতে জ্বালানির খরচও বেশি হতো। তাই খরচ কমাতেই বাস মালিকরা কাঠের তৈরি বাসের পরিবর্তে অ্যালুমিনিয়াম বডির বাস কিনতে শুরু করলেন। শেষে ২০০৯ সালে সরকারি নির্দেশে প্রায় সব কাঠের তৈরি পুরনো বাস অচল হল। এখনকার কলেজ পড়ুয়ারা তাই অনেকেই দেখননি এই কাঠের বাস।
কিন্তু ৫৬ নম্বর রুটে এখনও একটি কাঠের তৈরি বাস সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে। বাসের মেঝেতে পাতা কাঠের পাটায় হাজার হাজার যাত্রীদের পায়ের জুতোর ঘষায় ক্ষয়ে গিয়ে চকচকে পেরেকের মাথাগুলিতে এখনও ঐতিহ্যমাখা স্মৃতির ঝিলিক! বাসের কাঠের জানলা দিয়ে ঢোকা দমকা বাতাস এখনও যেন এখনও পুরনো দিনের গল্প বলার চেষ্টা করে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই ৫৬ নম্বর রুটের কাঠের বাসটি এখনও যাত্রী পরিবহণ করে চলেছে।
আগামী ৯ জুলাই এই কাঠের বাসটিকে ধর্মতলায় নিয়ে যাবেন বাসপ্রেমীদের একটি সংগঠন ‘কলকাতা বাস-ও-পিডিয়া’-এর সদস্যরা। হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত চলবে এই বাসযাত্রা। বাসের মধ্যে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হচ্ছে। বাসের পুরোনো ১০ পয়সার টিকিট থেকে শুরু করে বহু পুরোনো ফেয়ার চার্ট— এ সবেরই দেখা মিলবে এখানে। এই বাসযাত্রায় যোগ দেওয়ার কথা রাজ্যের পরিবহণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য রাজ্যে একটি পরিবহণ সংগ্রহশালা তৈরি করা যেখানে ঠাঁই পেতে পারে এই কাঠের বাসের মতো বাংলার গণপরিবহণের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একাধিক যান। বাংলার পরিবহণ ইতিহাসের সংগ্রহশালা তৈরির আর্জি জানাবে তারা সরকারের কাছে। পাশাপাশি, প্রায় শতাব্দী প্রাচীন ৫২ নম্বর রুটটিকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার অনুরোধও করা হবে। এমনটাই জানান ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্তচ নানা কর্মকাণ্ডে পালিত হবে কাঠের বাসের ঐতিহ্যের যাত্রা।