Durgapuja 2023: সে সময় ঘোর ইংরেজ শাসনকাল। পলাশীর যুদ্ধের অভিঘাত তখনও বাংলার রাজনীতিতে টাটকা। ১৭৭০-৭৫ সাল নাগাদ প্রায় ৩৫০ বছর আগে মহানন্দা নদীর ঘাটে পাওয়া গিয়েছিল মা দুর্গার (Durga Puja) চণ্ডী রূপের এক পাথরের মূর্তি। সেই মূর্তিটি স্বপ্নাদেশ পেয়ে এক বৃদ্ধা মালদার নিমতলা ঘাটে প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি আছে। ওই ঘাটেই মিলেছিল মূর্তি। সেই থেকে শুরু হয়ে আজও স্বমহিমায় বিরাজমান দেবী। প্রতি বছর পুজো হয় রমরমিয়ে। আজ পর্যন্ত হাজার ঝড়-জলেও যাতে ভাটা পড়েনি। মালদার (Maldah) ইংরেজবাজার শহর ঘেঁষেই বয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদী। সেখানেই দুর্গাবাড়ি মোড় এলাকার আদি কংসবণিক পরিবারের পুজো ৩৫০ বছর ধরে এলাকার মানুষের কাছে জাগ্রত বলে প্রচারিত।
পুজোর নেপথ্য়ের গায়ে কাঁটা দেওয়া কাহিনী
কথিত আছে, এক বৃদ্ধা স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তিটি মহানন্দা নদীর জল (Mahananda River) থেকে সংগ্রহ করে নিমতলা ঘাটে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। পরে সেই বৃদ্ধা প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর শহরের জমিদার পরিবার কংসবণিকরা মায়ের সেই পুজোর দায়িত্ব নিয়ে পাথরের মূর্তিটি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে জমিদার বাড়িতে পুজো হয়ে আসছিল। তারপর সেই জমিদারও মারা যান। এরপর পুজো চালানোর মতো কেউ না থাকায় পুজোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়ে মালদা শহরের আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যদের হাতে। কালক্রমে এটি তাঁদের পারিবারিক পুজোয় পরিণত হয়। বৈদিক প্রথা মেনে ফি বছরই হয়ে আসছে আদি কংসবণিক পরিবারের দুর্গাপুজো।
পুজোর ঘট ভরতে এক সাজে হেঁটে মহানন্দা নদীর সেই নিমতলা ঘাটেই যান আদি কংসবণিক পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। নিমতলা ঘাট থেকেই মহানন্দার জল তুলে এনে পুজোর ঘট ভরার রেওয়াজ অব্যাহত রয়েছে আজও। নিষ্ঠা, ভক্তি ও ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীরা আজও প্রায় সাড়ে তিনশো’ বছর আগের সেই ইতিহাসের গন্ধ খুঁজে পান। অনেকেই ভিড় জমান তাঁদের পুজোর জোগাড় দেখতে। প্রসাদ খেতেও যান অনেকে। নিমন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না।
মালদায় দুর্গাবাড়ি মোড়ে আদি কংসবণিক পরিবারের একটি দুর্গা মন্দির রয়েছে। সেটিও প্রায় ১৫৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন সেই নিজস্ব মন্দির গৃহেই মায়ের পুজো হচ্ছে। মন্দিরেই স্থাপিত রয়েছে মহানন্দা নদী থেকে পাওয়া পাথরের সেই প্রাচীন চণ্ডীমূর্তি। এখানে পূজিত হন দেবী চণ্ডী।