‘ফেলুদা চিঠিটা পড়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা সুলেখা ব্লু-ব্যাক কালিটা এক ঝলক দেখে নিলেন। চিঠিটা মনে হয় সেই কালিতেই লেখা।’ যাঁরা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র পড়েছেন, তাঁরা হয়তো ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে ওপরের অংশটা ‘সমাদ্দারের চাবি’ থেকে নেওয়া।
এই কালিতে লিখতে পছন্দ করতেন সত্যজিৎ রায়। ফেলুদার কাহিনিতে একাধিকবার সুলেখা কালির কথা লিখেছেন তিনি। ‘জন অরণ্য’ ছবিতেও দেখা গিয়েছে সুলেখা কালির দোয়াত। বাঙালির বই-পার্বণে পরিচালককে শ্রদ্ধা জানিয়ে সুলেখা কালির বিশেষ সংস্করণ এনেছে ওই সংস্থা। ৩০ এমএলের ওই বিশেষ সংস্করণের দাম ৫০০ টাকা। যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র তথা বিশিষ্ট পরিচালক সন্দীপ রায়।
শনিবার সুলেখার কর্ণধার কৌশিক মৈত্র 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে বললেন, 'ওঁর একাধিক লেখায় এই কালির উল্লেখ রয়েছে। নিজেও এই কালিতে লিখতে পছন্দ করতেন। তাই সম্মান জানাতে বিশেষ লিমিটেড এডিশন আনা হয়েছে। বইমেলায় আমাদের স্টলেও বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে যামিনী রায় এডিশনও। অনলাইনেও ডেলিভারি দেওয়া হবে। এবার বইমেলায় সুলেখার স্টল ৬ নম্বর গেটের কাছে ৩৭২ নম্বর।'
কলকাতার রকমারি কলম সংগ্রাহক শুভব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, 'একটা সময় পর্যন্ত ঝর্না কলম (ফাউন্টেন পেন)-এর কথা মুখে এলেই সুলেখার কথা মনে পড়ত। তিনি ফের ঝর্না কলমে ফেরার কথা বলছেন।' তাঁর মতে, ঝর্না কলমে হাতের লেখা ভাল হয়। মেধারও বিকাশ ঘটে। মহাত্মা গাঁধী নাম রেখেছিলেন ‘সুলেখা’। সত্যজিৎ রায় তো বারবার সুলেখা কালির কথা লিখেছেন তাঁর ‘ফেলুদা’ কাহিনিতে। এমনকি সত্যজিতের ছবিতেও দেখা গিয়েছে সুলেখার দোয়াত।'
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘ কাল বন্ধ ছিল 'সুলেখা'র কারখানা। ফের তা খোলে ২০০৬-এর শেষে। তার পর উৎপাদন চালু হলেও সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই কালি বাজার থেকে সরতে থাকে। প্রায়-বিস্মৃতিতে যেতে বসা সেই কালিকে আদি মোড়কে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠতে শুরু করলে তাতেই সাড়া দেন সুলেখা কর্তৃপক্ষ। তাতেই নয়া সংযোজন—সত্যজিৎ রায় শ্রদ্ধাঞ্জলী। আগ্রহীরা সুলেখার ওয়েবসাইটে গেলেও বিস্তারিত জানতে পারবেন।