৩১ মে, ১৮৯৩। দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারীতে ধ্যানস্থ হয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ৩ দিন ধ্যানরত হয়েছিলেন। পেয়েছিলেন আধুনিক ভারতের দিশা। তার পর শিকাগোয় ধর্মসভার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। তার পরের ইতিহাস কালজয়ী। সনাতন ধর্মের ধ্বজা উড়িয়েছিলেন জগৎসভায়। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অতীত ভারতের গরিমা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুণ্যভূমির সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেছিল গোটা বিশ্ব। আধুনিক ভারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন নরেন্দ্র। তার ঠিক ১৩১ বছর কন্যাকুমারীতে আর এক নরেন্দ্র।
৩১ মে কন্যাকুমারীতে ধ্যান শেষ করে তৎকালীন বম্বে বন্দর (এখন মুম্বই) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ধরেছিলেন বিবেকানন্দ। ২৫ জুলাই স্বামীজি পৌঁছন ভ্যাঙ্কুভার। সেখান থেকে ট্রেন ধরে ৩০ জুলাই পৌঁছন শিকাগোয়। শিকাগোয় থাকার মতো টাকাপয়সা ছিল না। পাশেই বস্টনে থাকছিলেন স্বামীজি। ১০ সেপ্টেম্বর শিকাগোর ধর্মসভার আগের দিন ক্ষুধার্ত স্বামীজিকে রীতিমতো ভিক্ষা করতে হয়েছিল। তবে শিকাগোর কারও দরজা খোলেনি সন্ন্যাসীর জন্য। অবসন্ন হিন্দু সন্ন্যাসীকে সাহায্য করেছিলেন জর্জ ডব্লু হেলের নামে এক দরদী মহিলা। পরবর্তীকালে হেল পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে বিবেকানন্দের।
তার পর ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর ধর্মসভায় ১০ ধর্মের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। দুপুরের আগে বলার সুযোগ এল না। তখন চেয়ারে বসেই ধ্যানমগ্ন, স্থিতধী, শান্তচিত্তে স্বামী বিবেকানন্দ। তার পর বলতে উঠতে উঠলেন। শুরু করলেন,'আমেরিকার ভাই ও বোনেরা...'। উঠল হাততালির ঝড়।
স্বামীজি বলেছিলেন,'আপনাদের এমন উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমার হৃদয় কতটা খুশি হয়েছে, তা ভাষায় বলা সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রাচীনতম সাধুসমাজের তরফে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সকল ধর্মের মা, বিভিন্ন ধর্মের লক্ষ লক্ষ মানুষের তরফে আপনাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি'। ধর্মের নামে হিংসা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন স্বামীজি। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, পারসিদের শেষ আশ্রয় ভারত। গীতা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, কেন হিন্দু ধর্ম সর্বজনীন। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে স্বামীজি আশা করেছিলেন, ধর্মের নামে উন্মত্ততার কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার সময় এসে গিয়েছে।
৩০ বছরের নরেন্দ্র বিশ্বজয় করেছিলেন। সেটা ছিল ১৮৯৩। ২০২৪ সালে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে কঠোর তপ করছেন তাঁরই শিষ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৈশোরে স্বামীজিকে আদর্শ মেনে গৃহত্যাগ করেছিলেন। তবে সন্ন্যাস নেওয়া হয়নি তাঁর। ছয়ের দশকে বেলুড় মঠে গিয়ে নিরাশ হয়েছিলেন সেই যুবক। শোনা যায়, রাজকোটের রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী আত্মস্থানন্দ যুবক নরেন্দ্র দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, এ ছেলেই ভবিষ্যৎ ভারতের কাণ্ডারি। সন্ন্যাসধর্ম নয়, এই নরেন্দ্র মানবসেবা করবেন রাজধর্মের মাধ্যমে।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে সঙ্গী করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। চিনেছেন ভারতকে। এবারও ২০০-র বেশি সভা করেছেন ভারতজুড়ে। এবার তাঁর লক্ষ্য তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। 'বিকশিত ভারত'-এর সংকল্প করেছেন মোদী। বাংলা ছেড়ে উত্তর ভারতে প্রথম বারাণসীতে পা রেখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। নরেন্দ্র মোদীও গুজরাত ছেড়ে বারাণসীতে প্রথম লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন।
শিকোগায় যাওয়ার আগে ধ্যান বসে সংকল্প নিয়েছিলেন স্বামীজি। ৪ জুন লোকসভার ভোটের ফলপ্রকাশ। তার আগে ৪৫ ঘণ্টা ধরে ধ্যান করবেন মোদী। তাঁরও সংকল্প উন্নত ভারত। নির্বাচনী সভাতেই বলেছিলেন,'গত ১০ বছরে যা হয়েছে তা নিছকই ট্রেলার। এবার আসল ফিল্ম দেখা যাবে। আরও বেশি উন্নয়ন'। দুই নরেন্দ্রই ঘর ছেড়েছেন দেশমাতৃকার জন্য। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাঁরা দু'জনেই নিজের কাজে সফল। ১৩১ বছরের তফাতে ধ্যানস্থ দুই যোগীকে মিলিয়ে দিল কন্যাকুমারী।