ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টি-২০ ম্যাচে ৮ রানে জয়লাভ করল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ভারত এই সিরিজ়ে আপাতত ২-২ ব্যবধানে সমতা ফিরিয়ে আনল। চলতি সিরিজ়ে এই প্রথমবার কোনও দল প্রথমে ব্যাট করে ম্যাচে জয়লাভ করল। ভারত প্রথমে ব্যাট করে আট উইকেটে ১৮৫ রান তোলে। জবাবে ইংল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে আট উইকেটে ১৭৭ রান তুলতে পারে। আগামী শনিবার এই সিরিজ়ের নির্ণায়ক ম্যাচ আয়োজিত হবে।
আজ টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। অন্য ম্যাচের তুলনায় আজ কেএল রাহুল যথেষ্ট ভালো ব্যাটিং শুরু করেন রোহিত শর্মার সঙ্গে। তবে ১২ বলে ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে হয় রোহিত শর্মাকে। ৩.৪ ওভারে আউট হলেন রোহিত শর্মা। আর্চারের বলে তিনি কট অ্যান্ড বোল্ড হলেন। রোহিতকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি অনুশীলন করাচ্ছেন আর্চারকে। বলটা একটি উপরের দিকেই ছিল। গত ম্যাচেও এমন একটা ক্যাচের সুযোগ এসেছিল আর্চারের কাছে। সেবার পারেননি। এবার ধরে নিলেন।
এরপর মাঠে নামেন সূর্যকুমার যাদব। সেই জায়গাতেই সূর্যকুমার যাদবকে মাঠে নামানো হয়। তৃতীয় টি-২০ ম্যাচে তাঁর জায়গায় খেলেছেন রোহিত শর্মা। কিন্তু, আজ ইশান কিষানের কুঁচকিতে চোট থাকায় চতুর্থ টি-২০ ম্যাচে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পান। আর প্রথম বলেই তিনি ছক্কা হাঁকালেন। আর্চারকে কেরিয়ারের প্রথম বলে ওভার বাউন্ডারি মারা সহজ কাজ নয়। তবে সেটাই তিনি করে দেখালেন। আর তারপরেই যেন তিনি নিজের কাঁধে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব তুলে নেন।
পাওয়ার প্লে চলাকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দল এক উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান করে। ৬.৪ ওভারের মধ্যেই ৫০ রানের চৌকাঠ স্পর্শ করে ভারতীয় ক্রিকেট দল। এরপর ঘটে অঘটন! ৭.৩ ওভারে ইনসাইড আউট শট খেলতে গেলেন কেএল রাহুল। কিন্তু, বেন স্টোকসের বল আরও একটু জোরে মারার দরকার ছিল। তাহলে বলটা মিড অফের ওপর দিয়ে যেত। কিন্তু, সেটা হল না।
মিড অফেই জোফ্রা আর্চারের বলে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন। ১৭ বলে তিনি ১৪ রান করলেন। মাঠে নামলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু, এ কী করলেন বিরাট কোহলি! ৮.৪ ওভারে আদিল রশিদের বল খেলতে গিয়ে এগিয়ে এলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু সেই বল তিনি মিস করেন। তারপর বিরাটকে দ্বিতীয়বার ব্যাট করার সুযোগ দিলেন না জস বাটলার। সোজা স্টাম্প উড়িয়ে দিলেন। রশিদের গুগলিতে পরাস্ত হলেন বিরাট। পাঁচ বলে তিনি ১ রান করলেন। ব্যাট করতে নামলেন ঋষভ পান্থ।
আজ যথেষ্ট ভালো খেলেছেন ঋষভ পান্থ। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে অভিষেক ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করলেন সূর্যকুমার যাদব। ১১.৬ ওভারে আদিল রশিদের বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ড দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে হাফসেঞ্চুরি করলেন সূর্যকুমার যাদব। আজ ২৮ বলে তিনি ৫০ রান করলেন। কিন্তু, অর্ধ শতরানের পর তিনি নিজের ইনিংসকে আর বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
১৩.২ ওভারে স্যাম কুরানের বলে তিনি ফাইন লেগের উপর দিয়ে মারতে যান। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন দাউয়িদ মালান। তিনি বলের নিচে হাতও নিয়ে এসেছিলেন। আর অসাধারণ দক্ষতায় তিনি বল মাটিতে ছোঁয়ার আগেই তালুবন্দি করে নেন। তবে এই আউট নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ৩১ বলে ৫৭ রান করে ফিরে গেলেন সূর্যকুমার যাদব। ছ'টি বাউন্ডারি এবং তিনটে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৮৪-র কাছাকাছি। জীবনে প্রথম বার টি-২০ ক্রিকেটে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এরপর হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে দলের স্কোরবোর্ড সচল রাখেন ঋষভ পান্থ। কিন্তু, ম্যাচ যত অন্তিমবেলায় এগিয়ে আসছিল, ততই বড় শট মারার দরকার পড়ছিল। ১৬.২ ওভারে জোফ্রা আর্চারের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন ঋষভ পান্থ। একেবার সোজা বল মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দিল। আজ ২৩ বলে তিনি ৩০ রান করলেন। ফাঁকা স্টেডিয়ামেই নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল।
এরপর খুব বেশিক্ষণ আর উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়াও। ১৮.৫ ওভারে মার্ক উডের ডেলিভারিটা কভারের উপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন হার্দিক। কিন্তু, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেন স্টোকস। তিনি পাখির মতো ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা ধরে নেন। ৮ বলে ১১ রান করে ফিরতে হল হার্দিক পান্ডিয়াকে।
আজ নির্ধারিত ২০ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে ভারতীয় ক্রিকেট দল। সূর্যকুমার যাদব ছাড়াও যথেষ্ট ভালো ব্যাটিং করেন ঋষভ পান্থ (২৩ বলে ৩০ রান) এবং শ্রেয়স আইয়ার (১৮ বলে ৩৭ রান)। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে চার উইকেট শিকার করেন জোফ্রা আর্চার। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন আদিল রশিদ, মার্ক উড, বেন স্টোকস এবং স্যাম কুরান।
এরপর শুরু হয় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। আজ শুরু থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে ব্রিটিশ ক্রিকেট দল। ২.৫ ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বল জস বাটলারের ব্যাটের উপরের কানা লেগে সোজা মিড অফের উপরে উঠে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেএল রাহুল। তিনি কোনও ভুল করেননি। ৬ বলে ৯ রান করে ফিরতে হল বাটলারকে।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অপর ওপেনার জেসন রয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন দাউয়িদ মালান। তাঁরা দ্বিতীয় উইকেটে ৩১ বলে ৪৫ রানের জুটি বাঁধেন। ৭.৫ ওভারে রাহুল চহ্বারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন দাউয়িদ মালান। তাঁর লেগ স্টাম্প উড়ে যায়। রাহুলের গুগলি তিনি বুঝতে পারেননি। ১৭ বলে ১৪ রান করে তাঁকে ফিরতে হল।
মালান ফিরে যাওয়ার পর তাঁকেই অনুসরণ করেন জেসন রয়ও। ৮.৫ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ডিপ মিড উইকেটে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন জেসন রয়। তিনি আজ ২৭ বলে ৪০ রান করলেন। ১০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যক্তিগত ৩ রানে লড়াই করছিলেন বেন স্টোকস এবং জনি বেয়ারস্টো। ইংল্যান্ডের তখন জিততে দরকার ৬০ বলে ১১৫ রান।
বেন স্টোকস এবং জনি বেয়ারস্টো তখন ধামাকাদার ফর্মে রয়েছেন। দেখতে দেখতে চতুর্থ উইকেটে ৩৬ বলে ৬৫ রান উঠে গেল। যেটা দরকার ছিল, সেটাই করে দেখালেন রাহুল চহ্বার। একটা উইকেট তুলে নিলেন। ১৪.৫ ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন জনি বেয়ারস্টো।
তিনি ১৯ বলে ২৫ রান করেন। ইংল্যান্ডের জিততে দরকার ৩০ বলে ৫৪ রান। অবশেষে ভারতের হাতে এল বড় সাফল্য। আর সেই সাফল্যটা তুলে দিলেন শার্দূল ঠাকুর। ১৬.১ ওভারে লং অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন বেন স্টোকস। সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে গেলেন। ২৩ বলে ৪৬ রান করে ফিরতে হল বেন স্টোকসকে।
আবারও নিজের পারফরম্যান্সের জ্বলওয়া দেখালেন শার্দূল। ঠিক পরের বলেই ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ইয়ন মরগ্যান। তিনি ৬ বলে ৪ রান করলেন। মাঠে নামলেন ক্রিস জর্ডন। তখন থেকেই আশা করা হচ্ছিল যে ভারত জিতলে এই ওভারটাই হবে টার্নিং পয়েন্ট। এরপর ১৭.৬ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন স্যাম কুরান। আজ স্যাম ৫ বলে তিন রান করেছেন।
সবশেষে ১৯.৫ ওভারে শার্দূল ঠাকুরের বলে লং অফ দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন ক্রিস জর্ডন। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি ক্যাচ ধরতে কোনও ভুল করেননি। জর্ডন ৯ বলে ১২ রান করলেন। শেষ বলে দরকার ছিল ৮ রান। ইনিংসের শেষ বলে কোনও রান নিতে পারলেন না জোফ্রা আর্চার। সেইসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট দল এই ম্যাচে জয়লাভ করল। ভারত এই ম্যাচ জিতে সিরিজ় ২-২ ব্যবধানে সমতা ফেরাল। আগামী শনিবার ফাইনাল ম্যাচ। এই ম্যাচেই কোন দল সিরিজ় জিতবে তা নির্ধারিত হবে। ম্যাচ সেরার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় সূর্যকুমার যাদবের হাতে।