scorecardresearch
 

India VS England Akash Deep: বাবা চাননি, চাকরি খোঁজার অছিলায় বাড়ি ছাড়েন, রাঁচি টেস্টে 'হিরো' বাংলার আকাশদীপ

রাজকীয় অভিষেক বললে কী ভুল হবে? একেবারেই নয়। যেন অনেক কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন এতদিন, সুযোগ পেতেই ফাটলেন। আর ফাটালেনও! হুংকার ছেড়ে যেন তিনি বললেন আমি তৈরি। আমি তৈরি এই যুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিতে, ভয় পায়না আমি। আসলে এতদিন তো যুদ্ধ করেই এসেছেন। তিনি হচ্ছেন বাংলার আকাশ দীপ।  

Advertisement
আকাশ দীপ আকাশ দীপ

রাজকীয় অভিষেক বললে কী ভুল হবে? একেবারেই নয়। যেন অনেক কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন এতদিন, সুযোগ পেতেই ফাটলেন। আর ফাটালেনও! হুংকার ছেড়ে যেন তিনি বললেন আমি তৈরি। আমি তৈরি এই যুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিতে, ভয় পায়না আমি। আসলে এতদিন তো যুদ্ধ করেই এসেছেন। তিনি হচ্ছেন বাংলার আকাশ দীপ। বাড়ি থেকে পালিয়ে দুর্গাপুরে চলে এসেছিলেন আকাশ। কাকার কাছে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর ক্রিকেটের নতুন অধ্যয়। 

বিহারের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে উঠে এসে আজ তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটের বাইশ গজে। যেখানে অনেক তারার জন্ম হয়, আবার অনেকে হারিয়ে যায় অকালেই। আজই ভারতীয় দলে তাঁর অভিষেক হল। টেস্ট ম্যাচে। প্রতিপক্ষ শক্তিশালি ইংল্যান্ড। অবশ্য এই ইংল্যান্ডকে দেখার পর শক্তিশালি 'তকমা' তাদের দেওয়া যাবে কি না তাতে রয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। অভিষেক টেস্টেই ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন-আপকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন বাংলার আকাশ দীপ। জসপ্রীত বুমরাকে এই টেস্টে বিশ্রাম দিয়ে তাঁর জায়গায় নেওয়া হয়েছে বাংলার এই তরুণকে। একেবারেই হতাশ করেননি তিনি, বরং দলের প্রত্যাশা আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, সফরটা এত সহজ ছিল না মোটেই। বার বার তাঁর সামনে এসে রাস্তা রুখে দাঁড়িয়েছে একের পর এক বাঁধা। কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি তিনি। পরিচয় দিয়েছেন নিজের সাহসী মানসিকতার। বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি তৈরি। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আইপিএলের মঞ্চ, বার বার নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। বল হাতে দিয়ে গেছেন একের পর এক ভালো পারফরম্যান্স। ফলও পেলেন হাতেনাতে। ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট অভিষেক হল অবশেষে। তবে তাঁকে গড়ে তোলার পিছনে বিরাট অবদান রয়েছে বাংলার প্রাক্তন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ, তথা বর্তমানে বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ীর। আকাশ দীপ কে নিয়ে তিনি বলেন, 'আকাশ একজন দুর্দান্ত বোলার। ওর মধ্যে যে বিশেষ ব্যাপারটা রয়েছে সেটা হলো যে টানা আট থেকে দশ ওভার ও একই গতিতে বল করতে পারে। এছাড়াও ওর আরো একটা গুণ রয়েছে সেটা হলো যে ও খুব ভালো ইনসুইং করাতে পারে। আপনি দেখবেন সোজা বল করার সময় কব্জি যেখানে থাকে, ইনসুইং করার সময়ও সেই একই জায়গায় কব্জি থাকে। ঠিক এই কারণেই ওকে খেলা কঠিন হয়ে ওঠে বিপক্ষ দলের ব্যাটারদের জন্য।'

Advertisement

বিহারের সাসারামে জন্ম এই তরুণের। তাঁর পরিবারে খেলাধুলার চল ছিল না সেভাবে। ফলে লড়াইটা কঠিন ছিলই। কিন্তু তাঁর লড়াই আরও কঠিন হয়ে যায় যখন মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে বাবা ও দাদাকে হারান তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি একেবারেই। তিন বছর পর ফের মাঠে ফেরেন তিনি, এবার যেনও আর বেশি জেদ নিয়ে। দুর্গাপুরে তাঁর মামার কাছে চলে আসেন তিনি ক্রিকেট খেলার জন্য। উল্লেখ্য, সেখানে থাকাকালীন তিনি একসময় টেনিস বলের ম্যাচ খেলে রোজ ৬০০০ টাকা উপার্জন করতেন। মাসে যা ছিল ২০০০০। এই দিয়েই সংসার চলত তাঁদের। ২৭ বছরের আকাশ দীপের ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় টেনিস বলেই। তাঁর বাবা রামজি সিং পেশায় ছিলেন শিক্ষক। কখনওই চাননি যে ছেলে ক্রিকেটার হোক, তাঁর ইচ্ছা ছিল ছেলে সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু ছোট থেকেই নিজের মনে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত ছিলেন আকাশ দীপ। সেই লক্ষ্যেই অবিচিল থেকে আজ তিনি ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে নিজের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। এই ম্যাচের পর যে তাঁর থেকে প্রত্যাশা আরও বেড়ে যাবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন আকাশ দীপের কাজ একটাই। নিজেকে ধরে রাখা, অসময়ে নিজেকে নিভতে না দেওয়া। জবাবটা তো দেবে সময়ই।

আরও পড়ুন

Advertisement