দিনটা ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন চেন্নাইয়ে আসন্ন আইপিএলের নিলাম অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। আর তারপর থেকেই আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের পঞ্জাবী মহল্লার আলোচনার বিষয়টা একেবারে বদলে গেছে। এই মহল্লাতেই রয়েছে গোপাল অরোরার হারবানস মিল্ক ডেয়ারি। তিনি অবশ্য বিষয়টা বেশ উপভোগই করছেন। প্রতিবেশিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও থেমে থাকছেন না। তাঁর ছেলে বৈভবই তো এবার শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সে জায়গা পেয়েছেন।
গোপালবাবুর দোকানে যাঁরা দুধ কিনতে আসেন, তাঁরা বৈভবকে বেশ ভালো করেই চেনেন। ২৩ বছর বয়সি এই জোরে বোলারের যখন হিমাচল প্রদেশের হয়ে খেলা থাকে না, তখন সে নির্দ্বিধায় বাবার কাজে হাত লাগান। সম্প্রতি কলকাতা নাইট রাইডার্স বৈভবকে তাঁর বেস প্রাইস ২০ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। আর ঠিক তারপরেই জয়পুরে আয়োজিত চলতি বিজয় হাজারে ট্রফিতে অভিষেক লিস্ট এ ম্যাচে মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সে হ্যাটট্রিক করেন।
বৈভব বললেন, "গত সপ্তাহটা আমার কাছে যথেষ্ট ঘটনাবহুল ছিল। প্রথমে আইপিএল টুর্নামেন্টে চুক্তি হল, তারপর এই হ্যাটট্রিক। আমি সবসময় লিস্ট এ ম্যাচে অভিষেক করার স্বপ্ন দেখতাম। বল করার ইচ্ছে ছিল। আইপিএল টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়া আমার কাছে একটা বড় ব্যাপার। আইপিএল টুর্নামেন্টে কলকাতা নাইট রাইডার্স একটা শীর্ষস্থানীয় দল। এই দলে প্রচুর প্রতিভাবান বোলার রয়েছেন।"
Bowled him! Knocked him over!
— Chandigarh University (@Chandigarh_uni) February 25, 2021
What a display of fast bowling by our Cricketing Star #VaibhavArora, who has been picked up by the team Kolkata Knight Riders for the @IPL 2021. We wish to see you make it to the Indian Cricket Team soon.. @BCCIdomestic pic.twitter.com/Bxa3eQlqqk
থানেতে সপ্তাহদুয়েক আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সিলেকশন ট্রায়ালে দলের সহকারি কোচ অভিষেক নায়ারের নজর কেড়েছিলেন বৈভব। চলতি বছরের শুরুতে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-২০ ট্রফিতেও হিমাচল প্রদেশের এই বোলার যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করেছিলেন। ছ'টি ম্যাচে তিনি ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে তামিলনাড়ুর কাছে হিমাচল প্রদেশ হেরে গিয়েছিল।
বৈভব বললেন, "এই প্রথমবার আমি সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে খেললাম। আমি নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম এবং ছাপ রাখতে চেয়েছিলাম। আর সেটা করতে পেরে আমি খুব খুশি।" এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২০১৯ সালে রনজি ট্রফিতে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিমাচল প্রদেশের হয়ে অভিষেক করেছিলেন বৈভব। সেই ম্যাচে তিনি ৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরমধ্যে প্রথম ইনিংসে তিনি চেতেশ্বর পূজারাকেও আউট করেছিলেন।
বৈভব যখন বাড়িতে থাকেন, তখন তিনি বাবার কাজে অনেকটাই সাহায্য করেন। গবাদি পশু দেখভাল করা থেকে বাইকে চেপে বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দেওয়া, সব কাজই তিনি করেন।
তিনি বললেন, "আশা করছি, ক্রিকেটে আমি যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করতে পারব এবং একদিন না একদিন দেশের হয়ে খেলব। আমরা একটা ছোটো বাড়িতে যৌথ পরিবারে বসবাস করি। তবে বাবা-মায়ের জন্য একটা বড় বাড়ি কিনতে চাই। তাঁদের একটু বিশ্রাম দিতে চাই। আমি খেলার জন্য কোর পরিশ্রম করে একেবারে উঁচুতে উঠতে চাই।"
গত বছর কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের (বর্তমানে পঞ্জাব কিংস) নেট বোলার ছিলেন বৈভব।
সবশেষে তিনি বললেন, "আমি আইপিএল চুক্তির এই টাকাটা বাবাকে উপহার হিসেবে দিতে চাই। এটা খুব একটা বেশি টাকা হয়ত নয়, তবে এটা পেয়ে তিনি খুব খুশি হবেন। আনন্দ পাবেন। ১৪ বছর বয়সে আমি যখন এই ক্রিকেট শিখতে চণ্ডীগড়ে গিয়েছিলাম, তখন উনি খুব নার্ভাস ছিলেন। আমাদের খুব বেশি টাকা ছিল না। তবে কোচ এবং স্কুল আমাকে খুব সাহায্য করেছিল।"
জুনিয়র ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করা সত্ত্বেও পঞ্জাব দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি বৈভব। সেকারণে তিনি ২১ বছর বয়সে কোচ রবি বর্মার সাহায্যে হিমাচল প্রদেশের হয়ে খেলা শুরু করেন।