আই লিগ এখন অতীত। আপাতত আইএসএলের লক্ষ্যেই ঝাঁপাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান ক্লাবের লোগোতে যেমন পালতোলা নৌকার ছবি রয়েছে, তেমনই ইস্টবেঙ্গলের লোগোতেও রয়েছে প্রজ্জ্বলিত মশালের ছবি। কিন্তু, এতকিছু জিনিস থাকতে হঠাৎ করে মশালের ছবিই কেন ব্যবহার করতে গেল ইস্টবেঙ্গল? এরজন্য তো আপনাকে ইতিহাসের পাতায় একটু পিছনের দিকে যেতেই হবে।
সালটা তখন ১৯৩০। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বয়স তখন ১০ বছর। গোটা দেশজুড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন তখন ধিকিধিকি করে জ্বলছে। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে দেশের একাংশ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেমেছেন। আর এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে মাথায় রেখেই ইস্টবেঙ্গলের লোগোতে মশালের ব্যবহার করা হয়। তবে ১৯৭০ সালে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে পাসা ক্লাবকে পরাস্ত করার পর এই লোগোটি বাঙালি ফুটবলারদের মধ্যে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
The flaming torch or moshaal first became East Bengal’s symbol in the 1930's, following Mahatma Gandhi's Satyagrah movement. It would later become popular as a symbol of triumph after East Bengal's 1-0 win over Pas club in the IFA Shield final in 1970.#100YearsOfGlory #WeAreSCEB pic.twitter.com/otMmOAQfH5
— SC East Bengal (@sc_eastbengal) October 28, 2020
প্রসঙ্গত, এই ম্যাচে ১-০ গোলে জয়লাভ করেছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। স্বাধীনতার পর কোনও বিদেশি ক্লাবের কাছে এটাই ছিল কোনও ভারতীয় ফুটবল ক্লাবের প্রথম জয়। এই দলে পিকে ব্যানার্জি, পিটার থঙ্গরাজ, শান্ত মিত্র, শ্যাম থাপা, সুরজিত সেনগুপ্তর মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা খেলেছিলেন।
১৯৭০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে প্রায় ৮০,০০০ দর্শকের সামনে পাসা ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। ইতিপূর্বে, ১৯৬৭ এবং ১৯৬৮ সালে তেহরান ফুটবল লিগ জিতে এসেছিল ইরানের এই ক্লাবটি। এই ম্যাচে ইরানের বেশ কয়েকজন জাতীয় দলের ফুটবলাররাও খেলতে নেমেছিলেন, যাঁরা ১৯৬৮ সালে ইরানের এএফসি এশিয়ান কাপজয়ী দলের অংশ ছিলেন। পাশাপাশি এই দলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইজ়রায়েল, এল সালভাদর এবং মরোক্কো থেকেও বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফুটবলাররা খেলতে এসেছিলেন।
শুভ বিজয়ার হার্দিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। pic.twitter.com/sBjZ82KsI8
— SC East Bengal (@sc_eastbengal) October 26, 2020
কে ভেবেছিল, এমন একটা ক্লাবের বিরুদ্ধে নিজেদের জাত চেনাতে পারবে বাংলার সদ্য কৈশোরে পা রাখা একটা ছোটো (তৎকালীন) ফুটবল ক্লাব? কিন্তু, সেই অসাধ্যসাধনই করে দেখিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেকেন্ড হাফের ইনজুরি টাইমে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে জয়সূচক গোলটি পরিমল দে'র পা থেকে বিদ্যুৎগতিতে বেরিয়ে এসেছিল। সেইসঙ্গে ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। গোলের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা 'নন্দন-কানন' জুড়ে উৎসবের মেজাজ ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে উপস্থিত প্রত্যেকটা দর্শক 'মশাল' হাতে দলের এই জয়কে স্বাগত জানান। গোটা আকাশ লাল-হলুদ আবিরে ঢাকা পড়ে যায়।
তো, এবার বুঝতে পারলেন তো ইস্টবেঙ্গলের লোগোতে কেন মশালের ছবি দেওয়া থাকে? আর এই ছবির তাৎপর্যই বা কী? আবার কোনও একদিন এমনই কোনও অজানা গল্প নিয়ে আমরা হাজির হব।