অচেনা নম্বর থেকে আচমকা ফোন! রিসিভ করতেই ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তি নিজেকে পুলিশকর্মী বা সরকারি কোনও পদাধিকারি পরিচয় দিচ্ছেন। তারপরই বলা হচ্ছে, হয় আপনার ফোন নম্বরটি বন্ধ হয়ে যাবে শীঘ্রই, না হলে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। আর সে কারণে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। ফলে বাইরে বেরোনো যাবে না। কাউকে কিছু জানানো যাবে না। সর্বক্ষণ ক্যামেরার নজরদারিতে থাকতে হবে। শেষে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ছাড় পেতে হচ্ছে। আর এভাবেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অপরাধীরা। সাইবার অপরাধের দুনিয়ায় নতুন এই পদ্ধতি ডিজিটাল অ্যারেস্ট। এহেন প্রতারণা ঘিরে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে।
সম্প্রতি কলকাতার এক বাসিন্দাও ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। শুধু কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো অপরাধের ঘটনা অহরহ ঘটছে। যার জেরে টাকা খোয়াচ্ছেন সকলে। ডিজিটাল গ্রেফতারি নিয়ে দেশবাসীকে সচেতন করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনও। তবুও এই জালিয়াতির ঘটনা কমছে না। আদতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট ঠিক কী? কীভাবে এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাবেন? জানালেন সাইবার বিশষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত।
ডিজিটাল অ্যারেস্ট কী?
এ ব্যাপারে সন্দীপ জানান, ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে আদতে কিছু হয় না। আসলে ভয় দেখিয়ে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতানো হয়। তাঁর কথায়, 'পুলিশ সেজে সাধারণ মানুষকে ধমক দিচ্ছে। ফোন করে বলছে, যে আপনি কোনও অপরাধ করেছেন, আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হচ্ছে।'
কীভাবে প্রতারণা করা হয়?
সন্দীপ জানিয়েছেন, 'বলা হতে পারে, আপনার নামে একটা পার্সেল পাওয়া গিয়েছে বিমানবন্দরে। পার্সেলে আপনার নাম-ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। আর একটা বলে যে, আপনার নামে একাধিক আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। আবার এ-ও বলা হয় যে, আপনার পাসপোর্টে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। অনেক সময় বলা হয়, আপনার নামে সিমকার্ডে ভুয়ো কল করা হয়েছে। এসব বলে মানুষকে ভয় দেখানো হয়। তারপরে ভিডিয়ো কল করা হয়। কলে দেখা যায়, পুলিশ অফিসার বসে আছেন। পুরো থানার সেট আপ থাকে। তারপরে ধমক দেখানো হয়।'
কীভাবে এড়াবেন ডিজিটাল অ্যারেস্ট?
সাইবার বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, প্লাস ৬, প্লাস ৯২ এসব নম্বর থেকে কল আসে। ৬ বা ৫ ডিজিটের নম্বর থেকে কল আসে। এই নম্বরগুলোর অস্তিত্ব নেই। ফলে এরকম কোনও নম্বর থেকে ফোন এলে ধরবেন না। আর ফোন ধরলেও ঘাবড়াবেন না। পুলিশ কখনও এরকম ফোন করে গ্রেফতারির কথা বলে না। যাঁরা ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যান এবং ভয় পেয়ে যান, তাঁরাই বেশি শিকার হন এই প্রতারণায়। মূলত পুলিশ, সিবিআই, আয়কর আধিকারিক, শুল্ক দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ফোন করেন।
যদি কেউ ডিজিটাল অ্যারেস্টের শিকার হন, তা হলে থানায় গিয়ে দ্রুত অভিযোগ জানান।