করোনার কারনে দীর্ঘ কয়েক মাস টয় ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকার পর অবশেষে পার্সেল ভ্যান নিয়ে দার্জিলিংয়ে যাত্রা শুরু করল টয় ট্রেন। টয়ট্রেনের এই সফরে প্রায় ৩০ বছর পর ফিরল পার্সেল পরিষেবা। শুধু তাই নয় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে নতুন সংযোজন জঙ্গল সাফারি। সব মিলিয়ে বুধবার সবুজ পতাকা নেড়ে এনজেপি-দার্জিলিং টয় ট্রেনের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করলেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ডিআরএম এস কে চৌধুরী ।
কোভিডের জন্য প্রায় ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল টয় ট্রেন পরিষেবা। অবশেষে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হল এই পরিষেবা। গত ১৬ অগস্ট দার্জিলিং থেকে ঘুমের মধ্যে টয় ট্রেন পরিষেবা শুরু হলেও বন্ধ ছিল দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত পরিষেবা। এ দিন চালু হল সেই পরিষেবাও।
উত্তরবঙ্গে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে দার্জিলিং-এর টয় ট্রেন। আর এই টয় ট্রেন সফরকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক রোমাঞ্চকর প্রেম কাহিনী ও বলিউড ও টলিউডের কতই না স্মৃতি। ১৯ শের দশকে রাজেশ খান্না ও শর্মিলা ঠাকুরের আরাধনা সিনেমার "মেরে স্বপ্নকি রানি কাব আয়েগি তু"। এই ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের ট্রেনে বসে সফর এবং রাজেশ খান্নার জিপে বসে গান মন কেড়েছিল দর্শকদের । তারপর সাইফ আলি খান ও বিদ্যা বালনের হিন্দি ছবি পরিণীতা সিনেমার "কস্ত মজা হো রেল মা"। এই ছবির অধিকাংশ দৃশ্য ও গানে জড়িয়ে রয়েছে টয় ট্রেনের ছবি। এরপর প্রখ্যাত বলিউড পরিচালক অনুরাগ বসু ছবি বরফি সিনেমার বেশকিছু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে বা টয় ট্র্নের সাথে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন "গুগুল" বিজ্ঞাপনের জন্যেও টয় ট্রেনকে বেছে নিয়েছিল।
পর্যটকদের কাছে বরাবরই টয় ট্রেন সফর রোমাঞ্চকর থাকলেও গত কয়েক বছর থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে ছুটে চলা এই খেলনা গাড়ির দৌড় কিছুটা থমকে গিয়েছে । প্রথমত ধসের কারণে তা মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকে। এবার আবার করোনার কারণে বন্ধ ছিলো একবছরেরও বেশী সময়। অবশেষে সব সংশয় কাটিয়ে বুধবার থেকেই চালু হয়ে গেলো টয় ট্রেন।
শুধু তাই নয় এবার পুজোয় উত্তরবঙ্গে আসা পর্যটকদের জন্য আরও একটি উপহার তুলে দিতে চলেছে রেল। আগামী সোমবার থেকে আবারো চালু হচ্ছে জঙ্গল সাফারি। রেলের তরফে জানানো হয়েছে ভিস্তা ডোম কোচেই হবে সাফারি । প্রতিদিন বিকেল ৪টের সময় ছাড়বে ট্রেন। অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। এর ভাড়া মাথাপিছু ১০০০টাকা। যদিও সিজন টাইমে তা বেড়ে হবে ১২০০টাকা।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে রসদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছিল এই টয় ট্রেন পরিষেবা। মূলত প্রথমদিকে পাহাড়ে পণ্য সামগ্রী ও সেনাদের রসদ পৌঁছে দিয়েছিল এই ট্রয় ট্রেন।
কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে টয় ট্রেনের পার্সোনাল ভ্যান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রাকালে আবারো ফিরল ৩০ বছর পুরনো পার্সেল পরিষেবা। জানাগেছে যে কোনও ব্যবসায়ী ৫ টন মাল ৫০০০টাকা ভাড়া দিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। এর চেয়ে কমও মাল নিয়ে যেতে পাড়া যাবে, সেক্ষেত্রে ভাড়াও কম লাগবে।
বুধবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রয় ট্রেন পরিষেবা পুনরায় যাত্রার সূচনা করেলন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ডিআরএম এস কে চৌধুরী । উপস্থিত ছিলেন রেলের অন্যান্য অধিকর্তারাও।
যদিও প্রথমদিনে হাতেগোনা যাত্রী নিয়েই পাহাড়ের দিকে ছুটল এই ট্রেন। এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয় ডি আর এম এস কে চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস পর ফের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেন পরিষেবা শুরু হলো । এছাড়া আমরা শিলিগুড়ি জংশন থেকে রংটং পর্যন্ত জঙ্গল সাফারি চালু করছি।
তিনি আরও বলেন, টয় ট্রেন হেরিটেজ তকমা পাওয়া, তাই আমরা এই পরিষেবা চালু রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই আমরা নতুন কোচ বানানোর পাশাপাশি নতুন রেললাইন ও ইঞ্জিনও বানাবো। আমরা চাই ট্যুর অপারেটররা তাদের প্যাকেজে এই ট্রেনটিকেও যুক্ত করুক। তাহলে এর প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বাড়বে। রেলও লাভবান হবে।