লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট ঘিরে জটিলতা প্রকাশ্যে এসে গেল। গত বৃহস্পতিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'সারা দেশে ইন্ডিয়া থাকব। বাংলায় তৃণমূল লড়বে।' তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই আলোচনা চলছে যে, বাংলায় একাই লড়বে তৃণমূল। এর পর শনিবার প্রদেশ কংগ্রেসের নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন অধীর চৌধুরী। জানিয়ে দিলেন যে, বাংলায় যেখানে কংগ্রেস রয়েছে, সেখানে তারা লড়বে। পাশাপাশি, মমতাকে আক্রমণ করে অধীর বলেছেন, 'দিদিই জোটের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। দিদি জোট চান না।' অধীরের এই মন্তব্যের পর বাংলায় বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র আসন সমঝোতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
কী বলেছেন অধীর?
শনিবার বহরমপুরে সাংবাদিক বৈঠকে অধীর বলেছেন, 'মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে বার বার হারিয়েছি, মালদহে হারিয়েছি। আমরা বলছি না, সারা বাংলা দখল করব। যেখানে কংগ্রেস আছে সেখানে লড়বে, জিতবে। আমরা লড়েছি, লড়ছি, লড়ব।' এর পরই মমতাকে নিশানা করে অধীর বলেছেন, 'দিদি সব জায়গায় ঠিক করছে মোদীর বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবেন। এই নাটক দেখতে আমরা অভ্যস্ত। মাথা মুণ্ড নেই। বাংলায় কংগ্রেস তার মতো করে লড়ছে। দিদিই জোটের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। দিদি নিজেই জোট চান না। কারণ অসুবিধা আছে। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বাংলায় কংগ্রেস নিজের লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। কে এল, গেল, যায় আসে না।'
কী বলেছিলেন মমতা?
গত বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনায় কর্মিসভায় বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'সারা দেশে থাকবে ইন্ডিয়া। বাংলায় তৃণমূল লড়াই করবে। তৃণমূলই বিজেপিকে শিক্ষা দিতে পারে। সারা দেশকে পথ দেখাতে পারে। অন্য কোনও দল নয়।'
বৃহস্পতিবার মমতার এ হেন মন্তব্য ঘিরেই রাজনীতির ময়দানে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, লোকসভার লড়াইয়ে বাংলায় একাই লড়তে চায় তৃণমূল। বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আবহে বাংলায় কংগ্রেসের জন্য তৃণমূল আসন ছাড়বে কিনা, সে নিয়েও জোরদার আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই মমতা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন যে, সারা দেশে 'ইন্ডিয়া' থাকলেও বাংলায় নিজের শক্তি দিয়ে লড়বে জোড়াফুল শিবির। আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা আগেই জানিয়েছেন, রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তারাই জোটে মুখ্য ভূমিকা পালন করুক। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সেই বার্তাই ফের দিতে চেয়েছেন মমতা। অর্থাৎ জোট হলেও তার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে বাংলার শাসকদল। অতীতে মোদী বাহিনীকে হঠাতে মমতাকে সামনে রেখে এগোনোর বার্তা দিয়েছিল তৃণমূল। এমনকী, ২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের সাফল্যের পর মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছিল জোড়াফুল শিবির। আবার, বিজেপিকে হারাতে যে তৃণমূলই পারবে, সেই বার্তাও বারবার দিয়েছে মমতার দল। কংগ্রেসকে নিশানা করে অতীতে তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, বিজেপিকে হারাতে ব্যর্থ কংগ্রেস। তাই মমতার মন্তব্য কংগ্রেসকে খানিকটা 'চাপে রাখার কৌশল' বলেও মনে করছেন অনেকে।
আসন সমঝোতার প্রশ্নে বুধবার মালদা দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী জানিয়েছিলেন যে, মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুর আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছেন মমতা। সেই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসন সমঝোতা নিয়ে তৃণমূলের একলা লড়াইয়ের বার্তা যে ভাবে দিলেন মমতা, তা তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুর কেন্দ্রে জিতেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল ২২ টি আসন।