বেড়াতে গিয়েছিল গোটা পরিবার। বাড়ি এসে দেখছে তালাভাঙা, আলমারি থেকে উধাও টাকা-গয়না। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের ঘটনা বেড়েছে। এবার এমনই এক চোরকে পাকড়াও করল বারাসাত থানার পুলিশ। আর তারপর তার কীর্তিকলাপ যা জানা গেল, তাতে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশকর্তাদের।
বাংলাদেশি চোর
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বাংলাদেশি। তার 'অপারেশন'-এর মূল ফান্ডা ছিল ফাঁকা বাড়ি। তাই কোথায় কোন বাড়ি ফাঁকা থাকছে, সেই খবরই রাখত। সন্ধ্যার নিরিবিলি সময়ে সুযোগ বুঝে কাজ শুরু করত। লোহার গ্রিল বা দরজা কেটে ঘরে ঢুকত। মূল টার্গেট থাকত সোনার গয়না। আলমারি কেটে সেই গয়না বের করে আনাই তার টার্গেট থাকত।
চুরির গয়না বাড়িতে নিয়ে এসে তা নিজের ওজন মাপার যন্ত্রে মেপে নিত। এরপর সেটা বিক্রি করে দিত।
তবে শুধু সোনাই নয়, বাড়িতে ঢুকে তেমন দামি কোনও জিনিস পেলে সেটাও হাতিয়ে আনত। বারাসাত জুড়ে একের পর এক এমন অপারেশন চালাত এই 'অভিজ্ঞ' বাংলাদেশি চোর। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগতে থাকে বারাসাতের মানুষ।
এদিকে বারাসাত থানায় একের পর এক চুরির অভিযোগ বাড়তে থাকে। নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এরপরেই দুঁদে পুলিশকর্তাদের নিয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। তাঁরা দেখেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুরির প্যাটার্ন প্রায় একইরকম। তাই এ পিছনে যে একজন বা একটি টিমই কাজ করছে, তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি তাঁদের।
হাতেনাতে ধরা
সেই থেকেই তক্কে তক্কে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বারাসাতের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় চুরি করতে বেরিয়েছিল অভিযুক্ত। আর সেই সময়ই হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তার নাম মিজানুর তালুকদার। বাড়ি বাংলাদেশের মাদারিপুরে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই কুকর্মের কথা স্বীকার করে। তার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে সোনা এবং টাকা উদ্ধার হয়েছে। অবশেষে চোরের গ্রেফতারিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের বাসিন্দারা। পুলিশের তদন্তের তারিফও করছেন অনেকে।
প্রফেশনাল চোর
অভিযুক্তর কাছ থেকে সোনা ও রূপোর গয়না এবং নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রায় ৪ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে এসেছিল মিজানুর। বারাসাত জেলা হাসপাতালের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। বয়স ৪৫ বছর। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিল।
বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে ভাড়াটের পরিচয় নিশ্চিত করুন
সোমবার বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখরিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনা বিস্তারিত জানান। তিনি বারাসাতের স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। অচেনা লোককে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও কী-কী নিয়ম মানতে হবে, তা জানান। তিনি বলেন, এবার থেকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে ছবি সহ পুলিশকে জানাতে হবে।
মিজানুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। কোন কোন বাড়িতে সে চুরি করেছিল, কিভাবে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকেছিল, কোথা থেকে গয়না চুরি করেছিল—সবকিছু মিজানুরকে দেখিয়ে দেখিয়ে জানার চেষ্টা করে পুলিশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশকর্তারা।