কলকাতার তারাতলায় জনপ্রিয় বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থা ব্রিটানিয়ার কারখানা বন্ধের খবর ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সোমবার থেকেই কারখানা বন্ধের খবরে হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। এই নিয়ে এবার রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষ তথ্য দেওয়া হল।
মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা অমিত মিত্র জানালেন, ব্রিটানিয়ার কারখানা কলকাতাতে থাকছে। তাঁর কথায়, 'অনেকে বলছেন, ব্রিটানিয়া বাংলা থেকে চলে গেল, এটা মিথ্যা।'
এদিন অমিত জানান যে, তাঁর সঙ্গে ব্রিটানিয়ার এমডি বরুণ বেরির ফোনে কথা হয়েছে। বরুণ অমিতকে জানিয়েছেন যে, বাংলায় এই কোম্পানি কাজ করতে বদ্ধপরিকর। অমিতের কথায়, 'ব্রিটানিয়া ১০০০-১২০০ কোটি টাকার বিস্কুট বানায়। এটা অন্যতম বড় বাজার এখানে।' অমিতকে বরুণ জানিয়েছেন যে, আগামী দিনে বাংলায় আরও ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থার রেজিস্টার্ড অফিস কলকাতাতেই থাকবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের বৈঠক যেমন কলকাতায় হয়, তেমনই হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কলকাতার তারাতলায় ব্রিটানিয়ার কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে বলে সোমবার খবর ছড়ায়। ওই কারখানায় চাকরিরত কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়।
ব্রিটানিয়ার সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ব্রিটানিয়ার বিভিন্ন বিস্কুট বাঙালিদের কাছে বিশেষ করে ভীষণই পছন্দের। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটানিয়ার কারখানা বন্ধের খবরে স্বভাবতই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল।
স্বাধীনতার বহু আগের কথা। আজ ব্রিটানিয়ার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। কিন্তু শুরুটা ছিল অনেক সাদামাটা।কলকাতার একটি ছোট দোকান থেকে যাত্রা শুরু। মাত্র ২৯৫ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু হয়েছিল। বিস্কুট খাবারটাই ব্রিটিশ উদ্ভাবন। তাই ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরাই এই বিস্কুটের কারবার শুরু করেছিলেন। পরে এটি ওয়াদিয়া পরিবারের হাতে আসে। ওয়াদিয়া পরিবারের হাতে আসার পরেই বিদেশি বিস্কুটে আসে ভারতীয় ছোঁয়া। ১৯১০ সালে, সেই সময়কার হিসাবে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক মেশিনের সাহায্যে বিস্কুট তৈরি শুরু হয়। তারপর ১৯২১ সালে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, বিদেশ থেকে গ্যাস ওভেন নিয়ে আসা হয়। এরপর বিক্রি এতই বেড়ে যায় যে একটা কারখানায় আর সামলানো যাচ্ছিল না। ১৯২৪ সালে মুম্বইতে আরও একটি কারখানা স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই ব্রিটানিয়ার ব্যবসায় দুরন্ত গতি আসে। সস্তায় জলখাবার, চায়ের সঙ্গে 'টা' হিসাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় ব্রিটানিয়া। ১৯৪৭ সালে, স্বাধীনতার বছরেই কলকাতার তারাতলার এই কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে ব্রিটানিয়া।