ঘূর্ণিঝড় রিমাল ২৬ মে মাঝরাতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, এর পরে বৃষ্টির কারণে অনেক অংশে জল জমেছে এবং গাছ পড়ে গেছে। ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য NDRF টিম মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তা থেকে উপড়ে পড়া গাছ সরানোর কাজ চলছে। উপকূলে আঘাত হানার পর ঝড়টি দুর্বল হয়ে এখন ধীরে ধীরে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হাওয়া অফিস বলছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে রিমাল। বেলা ১১টার মধ্যে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে প্রতি ঘন্টায় গতিবেগ থাকবে ৭০ কিলোমিটার। আজ বিকেলের মধ্যেই এটি সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কাছাকাছি দিয়ে এটি পৌঁছে যাবে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল এখন কোথায়?
বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল ২৭ মে সকাল ৫.৩০ মিনিটে ক্যানিং থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং মোংলা থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিমে দুর্বল ঘূর্ণিঝড় হয়ে পড়ে। এখন সিস্টেমটির ধীরে ধীরে আরও দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে আজও বৃষ্টি
রিমাল দুর্বল হলেও আজও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দক্ষিণবঙ্গে। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সব থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। দু-এক জায়গায় প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা। আজ অতিভারী বৃষ্টি হবে কলকাতা,হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় দমকা ঝড়ো বাতাস বইতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান এই জেলাগুলিতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় দমকা বাতাস বইতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগে বাতাস হইতে পারে। সোমবার বিকেল থেকে কলকাতাসহ উপকূল সংলগ্ন এবং পশ্চিমের জেলাগুলিতে আবহাওয়ার উন্নতি। মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার উন্নতি।
উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি বাড়বে
উত্তরবঙ্গের মালদা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে আজ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি আরো বাড়বে। ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায়। দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। বুধবারেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলায়। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। উত্তরবঙ্গের মালদা এবং দুই দিনাজপুরে আজ ৫৫ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও আজ দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে।
কলকাতায় বৃষ্টি চলবে
কলকাতায় আজ দিনভর মেঘলা আকাশ, হালকা ঝড়ো বাতাস, সঙ্গে বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শহরে। আজও দুপুর পর্যন্ত ঘন্টায় ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা।
রিমাল মেঘালয়ের দিকে এগোচ্ছে
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর পর এটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে এবং ধীরে ধীরে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এই কারণে এখানে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া চলাকালীন, বৃষ্টির কারণে অনেক অংশে জল জমে যায় এবং গাছ পড়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি ও মাঠ। আবহাওয়া দফতরের মতে, ২৭ মে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা, কাকদ্বীপ এবং জয়নগরের মতো এলাকায় বৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক প্রধান সোমনাথ দত্ত ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সোমবার শক্তিশালী বাতাস এবং বৃষ্টি হবে।
উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বৃষ্টির সতর্কতা
আবহাওয়ার পূর্বাভাসকারী স্কাইমেটের মতে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ বাংলাদেশ, ওড়িশার উত্তর উপকূল এবং ত্রিপুরার কিছু অংশে মাঝারি বৃষ্টি এবং বজ্রঝড় সহছু ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ বাংলাদেশ, ওড়িশার উত্তর উপকূল এবং ত্রিপুরার কিছু অংশে মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড় সহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়াও হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহারের পূর্বাঞ্চল এবং ঝাড়খণ্ডে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
অসম-মেঘালয়েও সতর্কতা
আসামের সাতটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির জন্য 'রেড অ্যালার্ট'ও জারি করা হয়েছে এবং ১১টি জেলায় 'অরেঞ্জ অ্যালার্ট' জারি করা হয়েছে। মৌসম ভবন ২৭ ও ২৮ মে অসম ও অন্যান্য উত্তর-পূর্ব রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের বিষয়ে সতর্ক করেছে। আসামের চিরাং, গোয়ালপাড়া, বাকসা, দিমা হাসাও, কাছাড়, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জ জেলার জন্য একটি 'রেড অ্যালার্ট' জারি করা হয়েছে, অন্যদিকে ধুবরি, দক্ষিণ সালমারা, বোঙ্গাইগাঁও, বাজালি, তামুলপুর, বারপেটা, নলবাড়ি, মরিগাঁও, নগাঁও, হোজাই এবং পশ্চিম কার্বি আংলং-এর জন্য 'কমলা সতর্কতা' জারি করা হয়েছে। ২৭ মে, দক্ষিণ অসম এবং মেঘালয়ে ৪০-৫০ কিমি ঘন্টা থেকে ৬০ কিমি প্রতি ঘন্টা বেগে শক্তিশালী বাতাস বইবে।