পুজোর আগে রাজ্য জুড়ে কার্যত চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মশা বাহিত এই রোগের দাপটে উদ্বিগ্ন কলকাতা পুরসভা। পরিস্থিতি মোকাবিলার বুধবার বিকেলে পুরভবনে জরুরি বৈঠক করলেন শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিক ছিলেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ এবং সাংসদ তথা তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেন।
রাজ্যের উদ্বেগজনক ডেঙ্গি পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও লাগাতার নিশানা করছে শাসক শিবিরকে। তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ডেঙ্গি এখনও অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণে, এবং তার কৃতিত্বটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এদিকে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা উত্তর চব্বিশ পরগনার। শেষ চার সপ্তাহের পরিসংখ্যানের নিরিখে যে ১৬টি পুরসভা ‘অতি বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার ১১টিই উত্তর ২৪ পরগনায় বলে জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতর যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে শেষ চার সপ্তাহে সংক্রমণের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করে ১৬টি পুরসভাকে ‘অতি বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পুরসভাগুলির মধ্যে রয়েছে বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম, হাওড়া, উত্তর দমদম, শ্রীরামপুর, বালি, বরাহনগর, কামারহাটি, বারাসত, অশোকনগর-কল্যাণগড়, নৈহাটি, উত্তরপাড়া, রাজপুর-সোনারপুর, ব্যারাকপুর, পানিহাটি, দমদম। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি পুরসভায় আক্রান্ত বেড়েছে। বাকি ছ’টি পুরসভার কোনওটিতে সামান্য কমেছে বা প্রায় একই আছে। বাকি জেলাগুলির চারটি পুরসভাতেও আক্রান্ত বেড়েছে। শুধু একটিতে কমেছে।
তথ্য বলছে, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গ্রামীণ অঞ্চলগুলির মধ্যে হাবড়া, গুমা, বনগাঁয় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে বনগাঁ ব্লকের আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোটা ব্লকে মোট আক্রান্ত ৬৩২ জন। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলে ২০সেপ্টেম্বর অবধি হিসেব অনুসারে, ৫ হাজার ৪৪৬ ও গ্রামাঞ্চলে ২ হাজার ৯৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আগের এক সপ্তাহে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৬ জন। বিধাননগর পুর-এলাকায় ১ হাজার ৯১৬, দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় ৯১৭, বারাসাত পুর-এলাকায় ২৩৯ জন আক্রান্ত। গ্রামাঞ্চলের মধ্যে আমডাঙা ব্লকে ৪৭৬, বনগাঁ ব্লকে ৬৩২, হাবড়া ২ নম্বর ব্লকে ৩৭৭, রাজারহাট ব্লকে ২৭৯ এবং দেগঙ্গা ব্লকে ১৯৯ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনার পাশাপাশি নদিয়ার পরিস্থিতিতে দ্রুত খারাপ হচ্ছে। নদিয়ার হরিণঘাটা ও রানাঘাটে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বলে জানা যাচ্ছে।