কলকাতা, বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব দুর্গাপুজো আর কদিন পরেই। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি একটু আলাদা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রভাব শুধু শহরের সামগ্রিক আবেগের উপর নয়, পুজোর জাঁকজমকের ওপরেও পড়েছে। প্রতিবাদের ঢেউ শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে, আর সেই ঢেউ পৌঁছেছে বড় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছেও। নামীদামী পুজো স্পনসরদের কাছে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যা বড় বাজেটের পুজোগুলির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতার বিখ্যাত ত্রিধারা সম্মিলনীর উদ্যোক্তাদের একজন জানিয়েছেন, "এবারের পুজোতে বহু স্পনসর হাতছাড়া হয়েছে। দিল্লি-মুম্বইয়ের স্পনসররা আগের মতো এগিয়ে আসছে না। যদিও বাজেটের কোনও বড় কাটছাঁট হয়নি, তবে পরিস্থিতির কথা ভেবে প্রভাত ফেরি ও সিঁদুর খেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।" এই পুজোর থিম এবং আয়োজন প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়ে যাওয়ায় বাজেটে বড় পরিবর্তন না হলেও, স্পনসরদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতার অন্যান্য বিখ্যাত পুজো যেমন বাদামতলা আষাঢ় সংঘের এক উদ্যোক্তা বলেছেন, "আমাদের পুজো আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে, তাই কোনও বড় পরিবর্তন হয়নি। তবে আমরা পুজো বন্ধ করতে পারব না, কারণ এতে বহু মানুষের রুজি-রোজগার জড়িত।" অন্যদিকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর উদ্যোক্তা সজল ঘোষ জানিয়েছেন, "পুজো হবে, কিন্তু কোনও বড় উৎসব হবে না। এবারের পুজোকে 'প্রতিবাদের পুজো' বলা যেতে পারে।"
আরজি কর কাণ্ডের অভিঘাত দুর্গাপুজোর স্পনসরশিপের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসায়িক স্পনসররা এই সময়ে পা ফেলছেন খুবই সাবধানে। উদ্যোক্তাদের একাংশের ধারণা, শেষ মুহূর্তে পৃষ্ঠপোষকদের গেট বা হোর্ডিংয়ের দর কমানোর চেষ্টা দেখা যেতে পারে। এই বছর শহরের পুজো শুধুই উৎসবের নয়, বরং বাঙালির প্রতিবাদেরও প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে। কলকাতার ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা শাশ্বত বসু অবশ্য একেবারেই হতাশ নন। তবে তিনি বলছেন, “এখনও সময় আছে। কিছুদিনের মধ্যেই স্পনসররা হাত বাড়াতে পারে। মুম্বই, বেঙ্গালুরুর অনেক অফিসের কর্তারাই যোগাযোগে আছেন।”
দুর্গাপুজোর সঙ্গে শুধু আবেগ নয়, রাজ্যের অর্থনীতিও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। সূত্রের খবর, কলকাতায় দুর্গাপুজো মানে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন। রাজ্যের জিডিপি-র চার শতাংশের বেশি। তবে উদ্যোক্তারা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে স্পনসররা কিছুটা হলেও এগিয়ে আসবেন এবং পুজোর জমক বজায় থাকবে।
উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানালেন, দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব, কিন্তু এবছর শহরের আবেগ এবং প্রতিবাদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রাখতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, দুর্গাপুজো হবে, তবে তার জৌলুস কিছুটা হলেও কমতে পারে।