বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ইলিশ মাছ তৈরির সমীকরণ বের করতে পারল। এবার এই মাছের অ্যাকোয়াকালচার শুরু করা হবে। আর এই প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলকে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য রহড়া ফ্রেশওয়াটার জোন, কাকদ্বীপের ব্যাকওয়াটার জোন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের ইন্টারমিডিয়েট জোনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইলিশ মাছের খাদ্য হিসাবে জু প্লাংটন ব্যবহার করবেন বিজ্ঞানীরা, এমনটাই জানা যাচ্ছে সূত্র মারফত। ফলে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশের জন্য আর বর্ষাকালের অপেক্ষা করতে হবে না, যে কোনও ঋতুতে পুকুর থেকেই পাওয়া যাবে ইলিশ মাছ।
বাংলার পুকুরেই ইলিশ চাষ করে রেকর্ড গড়ল আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিসারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিফরি)। মাত্র ৩৬ মাসে একটি ইলিশের ওজন হয়েছে ৬৮৯ গ্রাম। কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থার দাবি, নদীতেও এই সময়কালে একটি ইলিশের ওজন এত গ্রাম হয় না। তাই এমন সাফল্য গোটা দেশে নতুন রেকর্ড।
রাজ্যের গঙ্গায় আগে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে গঙ্গায় ইলিশের জোগান কমেছে। তাই গঙ্গায় ইলিশ বাড়াতে আগেই উদ্যোগী হয়েছে সিফরি। উচ্চ প্রবাহ থেকে নিম্ন প্রবাহ পথে ছোট ইলিশ ছাড়া হয়েছে। এছাড়াও, গঙ্গা থেকে পূর্ণবয়স্ক ফিমেল ইলিশ তুলে ডাঙায় ব্রিডিং করানো হয়েছে। কয়েক লক্ষ ইলিশের ডিমপোনা ছাড়া হয়েছে। নদীর পাশাপাশি, পুকুরেও কীভাবে ইলিশ মাছ চাষ করা যায়, তারও উদ্যোগ নিয়েছে সিফরি। আইসিএআর-এনএএসএফ প্রকল্পে সিফরি কর্তৃপক্ষ রাজ্যের তিন জায়গায় পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু করে।
সিফরি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুর মহকুমার রহড়ায় আইসিএআর-সিআইএফএ’র অধীনে একটি পুকুরে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে আইসিএআর-সিআইবিএ’র অধীনে একটি পুকুরে এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের জামিতিয়া গ্রামে আইসিএআর-সিফরি’র অধীনে একটি পুকুরে ইলিশ চাষ হচ্ছে। ৩৬ মাস অর্থাৎ তিন বছর আগে এই তিন জায়গাতেই ১০-১৫ গ্রাম ওজনের ইলিশের চারা ছাড়া হয়েছিল। ১ মে কোলাঘাটের জামিতিয়ার পুকুরে একটি ইলিশ ধরা হয়েছে। যার ওজন হয়েছে ৬৮৯ গ্রাম!
সিফরি সূত্রে খবর, বাকি দু’জায়গার ইলিশ এতবড় হয়নি। তবে, ৫০০ গ্রামের বেশি ওজন হয়েছে। কোলাঘাটের ওই পুকুরে রূপনারায়ণের জল ঢোকানো হয়েছিল। গঙ্গায় ৩ বছরে ইলিশ এত বড় হয় না। এখানে কী করে হল, তা খতিয়ে দেখছেন সিফরির বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিক অনুমান, গঙ্গায় ইলিশকে খাবার খুঁজতে বা শিকার করতে হয়। এখানে পর্যাপ্ত খাবারও দেওয়া হয়েছিল। তার একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।