পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন ইস্যু চিরকালের। তবে নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর সমস্যার পর থেকেই শিল্পায়ন এবং উন্নয়ন রাজনৈতিক পটভূমিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের দাবি ৩৪ বছরের 'অনুন্নত' বাংলায় ১০ বছরে পরিবর্তন এনেছেন তাঁরাই। রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইটি... শাসক শিবিরের তালিকা লম্বা। কিন্তু প্রশ্ন হল বাংলায় শিল্পায়ন কতটা হচ্ছে? কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে? ইন্ডিয়া টুডে ইস্ট কনক্লেভ ২০২১ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিবেক দেব রায় জানান, বাংলার শিল্প ও বৃদ্ধি একেবারেই গড় অবস্থানে। তবে সেই অবস্থান বদলের কিছু সমাধানও দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া টুডের এই অনুষ্ঠান থেকে প্রথমে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত শাহের পূর্ববর্তী বক্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি। অমিত মিত্রের কথায়,বাংলায় উন্নয়ন হচ্ছে অনেকটাই। যদিও বিবেক দেব রায়ের মত, "রাজ্য সর্বদাই কেন্দ্রকে দুষে আসে। ১৯৭০ সালে আমি অনেক কিছু দেখেছি। 'কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ' শব্দের উৎপত্তি হয় তখন। এখনও সেই নীতির বোধহয় বদল হয়নি। পে কমিশনের মাধ্যমে আর্থিক পরিকাঠামোকেই উন্নত করা হয়ে থাকে। সেই ব্যবস্থাও কেন্দ্র করে। কিন্তু এই বিষয়টি বাংলায় থেকে গিয়েছে। যে কারণে উন্নয়নে ভাঁটা।"
সম্প্রতি কেন্দ্রের প্রকল্প নিয়ে মমতা-মোদী শিবিরের তরজা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, "কেন্দ্রের প্রকল্প এবং কেন্দ্রীয় স্পনসর প্রকল্পের মধ্যে ফারাক থাকে। ভোট রাজনীতি কোনটা নিয়ে হয় তা কিন্তু বোঝার বিষয়। কেন্দ্রীয় প্রকল্প ১০০ শতাংশ ফান্ড করে ইউনিয়ন সরকার। অমিত মিত্র বারংবার বলেছেন কেন্দ্র, কেন্দ্র। মনে করিয়ে দিচ্ছি, কেন্দ্র বলে সংবিধানে কোনও শব্দ নেই। যেটা আছে তা হল ইউনিয়ন (কেন্দ্রীয়)। কেন্দ্রীয় স্পনসর প্রকল্পের মধ্যে ইউনিয়ন ও রাজ্য উভয়েই সেই টাকা দিয়ে থাকে। ৪৫৫ টি প্রকল্প রয়েছে এখন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র হয়ত এর কথাই বলেছেন। কিন্তু সেটাই বলার যে এগুলি একতরফা হয় তা নয়। রাজ্য-কেন্দ্র একসঙ্গে মিলে ঠিক করে সাধারণ মানুষের জন্য কোনটা আগে। "
মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার প্রধান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কোন বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিবেক দেবরায় বলেন, "প্রথম যেটা করতাম যে অন্যদের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। নিজের সমস্যাটা নিয়ে দেখতাম আগে। পাঁচ বছরে কী করেছি তা নিয়ে আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম। বিধানচন্দ্র রায়ের সময় বাংলা ছিল প্রথম সারিতে। এখন কিন্তু একটা গড় জায়গায়। বাংলার উন্নতির জন্য প্রথমেই আমি ঠিক করব আমি উৎপাদন করতে চাই কি না? করলে কী করব? কেন করব ? কোন জেলায় করব সেটা আগে দেখব। অর্থাৎ বাজার ও চাহিদাও দেখতে হবে। দ্বিতীয়, জমি। বাংলায় এটা বড় সমস্যার। ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ নয়। রাজ্যে কাছে জমি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, উৎপাদনের জন্য। তৃতীয়, শিক্ষা এবং দক্ষতা। যে উৎপাদন করব তেমন দক্ষ শ্রমিক কি আমার কাছে আছে? তেমন পড়াশুনো কি হচ্ছে?
চতুর্থ, আইন ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ। প্রশাসনিক জায়গা থেকে বলছি। তাই নিজের রাজ্যকে আগে দেখতে হবে। অন্যদের নয়।"