কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতি। বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। রোজই উঠে আসছে একের পর এক নয়া তথ্য। এই ঘটনার আবহে মনে করাচ্ছে ৪২ বছর আগের এক ভয়াবহ স্মৃতি। এই বাংলার বুকেই সে বার গণধর্ষণের পর এক নার্সের উপর অ্যাসিড হামলা করা হয়। যার জেরে প্রাণ যায় ওই নার্সের। যে ঘটনাতেও তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ন্যায় বিচার কি পেয়েছিলেন সেই নির্যাতিতা?
সালটা ১৯৮২। জুন মাস। বর্ষার সময়। মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছিল। রাতের অন্ধকারে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন এক নার্স। সেই রাতেই নেমে এল তাঁর জীবনে অন্ধকার। সাংবাদিক অরবিন্দ ভট্টাচার্য সেই ঘটনার কথা না তুলে ধরলে অন্ধকারেই থেকে যেত সেই রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনা।
সেই সময় রাজ্যে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বাম সরকার। কোচবিহার ছিল ছোট শহর। আর সেই শহরেই ঘটেছিল এই বর্বরোচিত ঘটনা।
উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের এক তরুণী কোচবিহারে এসেছিলেন সরকারি চাকরির জন্য। তিনি মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ হাসপাতালে স্টাফ নার্স হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর দিদি এবং জামাইবাবুর সঙ্গে একটি ছোট ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। শহরের এই এলাকাটি ডাকঘর নামে পরিচিত ছিল। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরছিলেন ওই তরুণী। সেদিন উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল এবং পুরো শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল।
সেই সময়ই এক সকালে ওই নার্সকে নগ্ন, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দেখতে পান তাঁর প্রতিবেশীরা। গণধর্ষণের পর তাঁর উপর অ্যাসিড হামলা চালানো হয়েছিল। ঝলসে গিয়েছিল গলা। পুড়ে গিয়েছিল গোপনাঙ্গ। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ হাসপাতালে নিয়ে যান। ভর্তি করানোর কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া খুবই ধীর গতিতে এগোচ্ছিল। ধৃতদের মধ্যে ৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু হাইকোর্টে পরে তারা জামিন পায়। বাকি ৭ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছিল, ঘটনার প্রধান অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন সরকারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ছিল। তারপর...
কেটে গিয়েছে ৪২ বছর। এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর আত্মীয়রা। কিন্তু এখনও বিচার মেলেনি।