পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ডিসেম্বর মাস এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে রাজ্য সরকার গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের জন্য এক নজিরবিহীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা করেছে। আবাস যোজনার (West Bengal Awas Yojana) আওতায় শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই ১২ লক্ষ পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তি হিসেবে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা করে পাঠাবে নবান্ন। এই উদ্যোগে মোট ৭২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র ও সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে একথা জানা যাচ্ছে।
এক নজরে নতুন মাইলফলক
এই অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ একপ্রকার রেকর্ড গড়তে চলেছে। এত বড় অঙ্কের অর্থ কোনও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগে কখনও এক লপ্তে গরিব মানুষের কাছে পাঠানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে রাজ্যের আর্থিক পরিকল্পনায় একটি সাহসী পদক্ষেপ।
অতিরিক্ত বরাদ্দ ও দ্রুততার নির্দেশ
প্রথমে ১১.৩২ লক্ষ পরিবারকে আবাস যোজনার আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তা বাড়িয়ে ১২ লক্ষ করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই অর্থ প্রদান সম্পূর্ণ করার জন্য পঞ্চায়েত দপ্তর ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে। আগে এই সময়সীমা ছিল ২৩ ডিসেম্বর, কিন্তু তা আরও এগিয়ে এনে দ্রুত অর্থ প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
অন্য সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ
শুধু আবাস যোজনা নয়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পেও ডিসেম্বর মাসে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ২ কোটি মহিলা উপভোক্তার জন্য এই অর্থ নির্ধারিত, এবং সম্প্রতি আরও ৫ লক্ষ নতুন নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রের অর্থ আটকে
কেন্দ্রীয় সরকার ৮২০০ কোটি টাকার আবাস যোজনার তহবিল আটকে রেখেছে। অভিযোগ, উপভোক্তাদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় তহবিল ছাড়া রাজ্যই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এই জেদাজেদি রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
আবাস যোজনার এই পদক্ষেপ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ছমাস আগে ১২ লক্ষ পরিবারে দ্বিতীয় কিস্তি পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারে একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অনুকরণে শুরু হওয়া প্রকল্পগুলির ভোটে সাফল্য পশ্চিমবঙ্গে এই উদ্যোগের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।