দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতি সুমারির দাবি উঠতে শুরু করেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী-র মতো দেশের প্রথম সারির রাজনীতিবিদরা এই দাবিতে সরব হয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই দাবিকে কার্যত সমর্থন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এখন এ নিয়ে কিছু বলছি না। তবে সবাই যদি সহমত হয়, তাহলে আমার কোনও আপত্তি নেই।' দেখেশুনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে জাতি সুমারিকে সমর্থনই করছেন। আর এর পিছনেও রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। কী সেই কারণ, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের যুক্তি দেওয়ার আগে দেখে নেব কী এই জাতি সুমারি?
আরও পড়ুন : পৃথিবী এক সেকেন্ডের জন্য যদি থামে! কী হবে? রইল
জাতি সুমারি কী ?
আদমসুমারি বা জনগণনা সাধারণত করা হয় তিনটি শ্রেণির উপর। সাধারণ, তপশিলি জাতি ও উপজাতি। কিন্তু, সাধারণের মধ্যেও অনেক ভাগ রয়েছে। একইভাবে তপশিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যেও অসংখ্য ভাগ রয়েছে। তাই যদি এই সারসংক্ষেপটি সঠিকভাবে না করা হয়, তাহলে সংরক্ষণের নির্ভুলতা বজায় থাকবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। মায়াবতী, তেজস্বী বা নীতিশ কুমারদের যুক্তি এই জাতি সুমারি না হলে সংরক্ষণ নিয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বন করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই এর প্রয়োজন।
নীতিশ-তেজস্বী-মায়াবতীর পদক্ষেপ
জাতভিত্তিক জনগণনার আর্জি নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নীতিশ কুমার। তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করতে এসেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি, বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিজয়কুমার-সহ ১০ দলের নেতারা। অর্থাৎ কার্যত পরিষ্কার জাতি সুমারি চেয়ে বিহারের সব রাজনৈতিক দল এককাট্টা হয়েছে।
আবার মায়াবতীর গলাতেও নীতিশদের সুর শোনা গিয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জাতি সুমারির পক্ষে। যদি এতে সম্মতি দেয় তাহলে তিনি কেন্দ্রকে সমর্থন করবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
মমতার জাতি সুমারি-তে সায় দেওয়ার কারণ
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মমতার জাতি সুমারি-তে সায় দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ২৪ এর লোকসভা ভোট। সেই ভোটে বিজেপি বিরোধী জোট করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। মোদী বিরোধী সব শক্তিকে তিনি পাশে পেতে চাইছেন। আর সেই তালিকায় রয়েছেন মায়াবতী, তেজস্বী যাদবরাও। তাঁরা যখন জাতি সুমারিকে সমর্থন করছেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক স্বার্থেই একে সমর্থন করবেন। কারণ, তিনি সমর্থন না করলে জোটের সম্ভাবনা আগে থেকেই কেঁচে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : Covid Third Wave : COVID থার্ড ওয়েভ! অক্টোবরে শিখরে-আক্রান্ত হবে শিশুরাও: কেন্দ্রের প্যানেল
আর একটি কারণ হল, এরাজ্যের বিধানসভারল ফলাফল। রাজনৈতিক মহলের মতে, সার্বিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল একুশের ভোটে ভালো ফল করলেও বনগাঁ এবং রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত ১৪ টি বিধানসভার ফলাফলে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। বনগাঁ লোকসভা যেখানে ৫৫% মতুয়া ও নমশূদ্র ভোটার, সেখানকার সাতটি আসনই পেয়েছে বিজেপি। আবার রানাঘাট লোকসভার সাতটি আসনের মধ্যে ছটি দখল করেছে গেরুয়া শিবির। এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার যেসব জায়গায় সংরক্ষিত আসন রয়েছে, সেখানে এখনও দিলীপ ঘোষদের কোণঠাসা করতে পারেনি ঘাসফুল শিবির। তাই জাতি সুমারির মধ্যে দিয়ে মতুয়া বা সংরক্ষিত শ্রেণির ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জাতি সুমারির দাবি বিজেপির একাংশও করছে। তাই সেই লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না তৃণমূল কংগ্রেসও। উনিশের লোকসভা ভোটের আগে এসসি, এসটি, ওবিসি-দের নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেছিল রাজ্যের শাসকদল। বিধানসভা ভোটের আগেও একই দাবি করেছিল তারা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, গেরুয়া শিবিরের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গের এসসি, এসটি, ওবিসিদের ভোটব্যঙ্ক নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। আর তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জাতি সুমারির অস্ত্রে বিজেপি-কে বধ করতে চান।