আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আগেই। অবশেষে হচ্ছেও তাই। নন্দীগ্রামের ভোটের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আগামিকাল শুক্রবার মামলার শুনানি। বেলা ১১টায় বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে মামলার শুনানি হওয়ার কথা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফের একবার সরগরম রাজ্য রাজনীতি। যার আঁচ ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত 'এপিসেন্টার' হয়ে উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম (Nandigram)। কারণ ওই কেন্দ্র থেকেই লড়াই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয়ে হঠাৎই সেখান থেকে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা। নন্দীগ্রামকে নিজের 'মেজোবোন' বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সেই নন্দীগ্রামেই প্রার্থী হন মমতার একসময়ের সঙ্গী তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভোটে দাঁড়িয়েই মমতাকে হাফ লাখ ভোটে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি। যার জেরে নন্দীগ্রাম শুধু মমতা-শুভেন্দুর কাছেই নয়, তৃণমূল-বিজেপির কাছেও হয়ে উঠেছিল 'প্রেস্টিজ ফাইট'।
একদিকে যেমন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী করতে উঠে পড়ে লাগেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা, অন্যদিকে তেমনই শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) জয়ী করতে লাগাতার আনাগোনা শুরু হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আর শুধু প্রচার পর্বেই নয়, ভোটের দিনও দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় নন্দীগ্রামে। বিশেষত ভোটের দিন দুপুরে বয়ালের একটি বুথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাওয়ার পরেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পালটা বিজেপি বাইরে থেকে লোক এনে ভোট করাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতাও। এমনকী বুথ থেকেই তিনি ফোন করেন রাজ্যপালকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এরপর আসে প্রতিক্ষার দিন। ২ মে, অর্থাৎ ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিন। সকাল থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল মমতা ও শুভেন্দুর মধ্যে। কখনও তৃণমূলনেত্রী এগিয়ে তো কখনও এগিয়ে বিজেপি নেতা। এরপর সন্ধের দিকে একসময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, নন্দীগ্রামে জিতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে হারিয়েছেন ১২০০ ভোটে। যার জেরে উল্লাসে মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। কিন্তু সেই উল্লাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই জানা যায় ১৭৩৬ ভোটে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপরেই গণনায় কারচুপির অভিযোগ তোলেন মমতা। পুনর্গণনার দাবিও তোলে তৃণমূল। একইসঙ্গে আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। অবশেষে সেই আদালতের দ্বারস্থই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে আগামিকাল আদালতে কী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিকমহল।