নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে কেন ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা হল না এখনও, এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফের নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নেতাজি-জয়ন্তীতে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এই নিয়ে সরব হন মমতা। পাশাপাশি, সোমবার রাম মন্দিরের উদ্বোধনে ছুটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেছেন, 'রাজনৈতিক প্রচারের' জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ যাঁরা দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হল না।
এই প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, 'আমি লজ্জিত যে, একটা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য ছুটি দেওয়া হল। অথচ, যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন, তাঁদর জন্য ছুটি দেওয়া হল না।'২৩ জানুয়ারি ছুটি ঘোষণা করা হোক, দীর্ঘ দিন ধরেই এই দাবি জানিয়ে আসছেন মমতা। তাঁর সংযোজন, 'নেতাজি জয়ন্তীকে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণার জন্য সারা জীবন ধরে লড়াই করে আসছি। কিন্তু, আমার দু:খ যে, আমি ব্যর্থ।'
মঙ্গলবার রেড রোডে নেতাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। সেখানেও দাবি করেন কেন্দ্র সরকার কথা দিয়ে কথা না রাখার। প্রশ্ন তোলেন, 'তিনি কোথায় হারিয়ে গেলেন? তিনি চলে যাওয়ার পর তাঁর কী দশা হল, তাঁর ওপর কী অত্যাচার হয়েছিল, তাঁকে কোথায় পাঠানো হয়েছিল? তিনি কি আদৌ লুকিয়ে ছিলেন? আমরা আজও জানি না।' পাশাপাশই এ-ও বলেন, 'তৃণমূল সরকার আসার পর ৬৪টা ফাইল প্রকাশ্যে এনেছিল, বিজেপি সরকার বলেছিল তারা ফাইল বের করবে, ভুলে গেছে।'
গত শুক্রবার উত্তরবঙ্গের মেখলিগঞ্জে সভা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সেই সময়ই নেতাজি-প্রসঙ্গ ওঠে। বিরোধী দলনেতা বলেন, 'নেতাজির মৃত্যু নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমাদের কাছে নেতাজি অমর।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অমর। তাঁর মৃত্যু হতে পারে না।' এর পরেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, 'নেতাজি যাতে প্রধানমন্ত্রী যাতে হতে না পারেন, সেই সময় জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের নেতারা নেতাজিকে গায়েব করেছেবন বলে বিশ্বাস। নেতাজির নিখোঁজ রহস্যের উদঘাটন দেখতে চাই। প্রকৃত দোষী কারা, জানতে চাই।'
নেতাজিকে ঘিরে রহস্যের অন্ত নেই। ২০১৫ সালে রাজ্যের হাতে থাকা ৬৪টি ফাইল প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'শেষ পর্যন্ত ওঁর কী হয়েছিল, জানি না। এই সব রিপোর্টের কয়েকটি পাতা দেখেছি, যাতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ১৯৪৫ সালের অগস্টের পরও নেতাজি বেঁচেছিলেন।' ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট জাপানের তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর আজও স্পষ্ট নয়। নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল রাশিয়া থেকে আনার দাবি জানিয়েছিলেন মমতা। জাপানের রেনকোজি স্মৃতিমন্দিরে নেতাজির দেহাবশেষ রাখা রয়েছে বলে দাবি করা হয়, তার ডিএনএ পরীক্ষা কেন করা হল না, তা নিয়েও অতীতে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা।