বিমান-সড়ক-রেলপথে তো যোগাযোগ রয়েইছে, এবার প্রতিবেশী দেশের রাজধানী ঢাকায় নৌ ভ্রমণও করতে পারবে ভ্রমণপিপাসু। সঙ্গে বাড়তি পাওনা ওপাপ বাংলার সুন্দরবনও। নদী এবং জলপথে এই বিলাসবহুল যাত্রা শুরু হয়েছে গত নভেম্বরেই। ঢাকার সব থেকে বড় ক্রুজ সংস্থা এম কে শিপিং লাইন বিগত দেড় মাস ধরে সপ্তাহে একদিন এই পরিষেবা আগে থেকেই দিচ্ছে। ভারতীয় অংশীদার হিসেবে নতুন বছর থেকে এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে কলকাতার সংস্থা গঙ্গা ট্যুরিজম। ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে এই যৌথ ট্যুরের সুযোগ মিলবে।
এর আগে বেনারস থেকে অসম গিয়েছিল বিলাসবহুল জাহাজ। সেই জাহাজ গিয়েছিল বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে। এবার আবার জলপথে যুক্ত হয়েছে ঢাকা এবং কলকাতা। ঠিক হয়েছে ঢাকার সদরঘাট থেকে কলকাতা পর্যন্ত চলবে ওই প্রমোদতরী। ‘এমভি রাজারহাট-সি’। এই বিলাসবহুল প্রমোদতরী গত ২০ নভেম্বর থেকে চালান শুরু করেছিল এমকে শিপিং লাইন্স। ভারতীয় অংশীদারি হিসেবে নতুন বছর থেকে এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে কলকাতার সংস্থা গঙ্গা ট্যুরিজম।
জলপথে এই ভ্রমণে পর্যটকরা আসবেন সুন্দরবন ছুঁয়ে। এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়েছে এই রকম নৌভ্রমণ । যারা এর আয়োজন করেছেন তাদের দাবি, এটা বাংলাদেশের ভ্রমণকজে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে এই বিলাসবহুল ক্রুজ।
কোন রুটে ভ্রমণ
কলকাতার আউট্রাম জেটি থেকে ইমিগ্রেশন পাসপোর্ট এবং ভিসা চেকিং। তারপর ছোট বোটে চড়ে একেবারে মাঝ গঙ্গায়। সেখানেই নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে থাকবে ক্রুজ। বোর্ডিং কমপ্লিট হলে ক্রুজ এগিয়ে চলবে ইন্দো বাংলাদেশ প্রটোকল রুট ধরে। অর্থাৎ বজবজ, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, সজনেখালি, হেমনগর ইন্দো বাংলা জলপথ বর্ডার পর্যন্ত গিয়ে তা প্রবেশ করবে বাংলাদেশে। এরপর বাংলাদেশর কটকা, করমজাল ইকোপার্ক, বাংলাদেশ সুন্দরবন খাঁড়ি দিয়ে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে যাত্রা।
কী কী রয়েছে এই বিলাসবহুল ক্রুজে?
৪ তলা ক্রুজে মোট ৬৮ টা কেবিন। এরমধ্যে লাক্সারি কেবিন ১২টি। তাতে থাকতে পারবেন ২৪ জন। ডাবল বেড কেবিন ২০টি। থাকতে পারবেন ৪০ জন। সিঙ্গল কেবিন ৩৬টা। থাকতে পারবেন ৩৬ জন। বাকি ২৪০ টি সাধারণ স্লিপার বেড আছে। জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট এবং যাত্রী নিরাপত্তা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। সেখানে দাবা, ক্যারাম, লাইভ মিউজিকসহ বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। জাহাজেই একজন চিকিৎসক থাকবেন।
কত খরচ হবে?
এই জাহাজে থাকতে পারবেন ৩০০-৩৫০ জন। মাথাপিছু ভাড়া ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ৯ জানুয়ারি থেকে মাসে ১ বার মিলবে পরিসেবা। বুক করা যাবে ফোনে বা ওয়েবসাইটে। অথবা সরাসরি চলে যাওয়া যাবে গঙ্গা ট্যুরিজমের কলকাতা অফিসে। ভ্রমনের সময়ে ওই জাহাজের ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে পারবেন পর্যটকরা। সেখানে ২টি ‘মানসম্মত ক্যান্টিন’ থাকবে। ওই ভ্রমনকারীরা, নিজের খরচে সেখান থেকে পছন্দমত খাবার খেতে পারবেন।
কবে থেকে যাত্রা ও কোথায় বুকিং?
৯ জানুয়ারি থেকে নতুন ভাবে যাত্রা করবে বিলাসবহুল ক্রুজ । বুকিং এবং আরও বিস্তারিত জানতে আপনি ফোন করতে পারেন 8100109955 নম্বরে। ইমেল করতে পারেন info@gangatourism.in আইডি তে অথবা সপ্তাহের যেকোনো কাজের দিন অফিস টাইমে সরাসরি গিয়ে কথা বলতে পারেন সংস্থার কলকাতার অফিস- ১৯ নম্বর নেতাজি সুভাষ রোড, বিবাদী বাগে।
এর আগেও দুই বাংলার মধ্যে উপকূল এবং নদীপথে জাহাজ চলাচল করলেও তা লাভজনক হয়নি। কিন্তু এবার এই যাত্রা সফল হবে বলেও আশাবাদী আধিকারিকরা। এর আগে, ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’ নামে ক্রুজটির উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করে বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ হয়ে গঙ্গা বিলাস ত্রুজ আন্তর্জাতিক জলসীমান্ত পার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’ ৫১ দিনে ভারতের পাঁচটি রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অসমে প্রবেশ করে। এটাই ছিল বিশ্বের সব থেকে লম্বা বিলাসবহুল ক্রুজ যাত্রা। এমভি গঙ্গাভিলাস, বিপুল খরচের জন্য নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। এর আগে, ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে কলকাতা এসেছিল ‘এমভি মধুমতি’। কিন্তু তা লাভজনক হয়নি। প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের এক তৃতীয়াংশ ভারতে। বাকি দুই তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে। পর্যটকরা যাতে জলপথে সুন্দরবনের স্বাদ নিতে পারে সেই কারণেইকলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত নৌ ভ্রমণ শুরু হতে চলেছে। এই গোটা জার্নিতে মোট সময় লাগবে ৭২ ঘন্টা।