উনি আমাকে মেদিনীপুরে নেতা করে রেখেছিলেন। বিজেপি আমাকে রাজ্যের নেতা করেছে। তাই উনি আমার নাম নেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে এমনটাই বললেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'আমার নাম নেন না। বলছেন লাস্টে যিনি বললেন। মানে তু তু ম্যায় ম্যায়। আমায় বিরোধী দলনেতা ভাবতে পারেন না'
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পঞ্চায়েত নিয়ে আলোচনার সময় শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখেন। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে ওঠেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যিনি এর আগে বললেন, তিনি তৃণমূলে ছিলেন, তিনি আগের কথা বললেন না।'
এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, হ্যাঁ ছিলাম। আমি তখন ভোট লুঠ করতে দিইনি। সেবার জিতেছিল। কিন্তু আমি ছিলাম না যখন ভোট লুট হয়েছে। আর তারই ফলে পরে হেরেছে তৃণমূল। আসলে যে মানুষদের ভোট দিতে আটকেছেন, তারাই হারাবে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নন্দীগ্রামে দু' ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?' অর্থাৎ চক্রান্ত করে নন্দীগ্রাম এর আগে শুভেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দুর জবাব, একই বিল্ডিংয়ে তিনটি জায়গার গণনা হয়েছিল। মহিশাদলেরও গণনা হয়েছিল। ওই একই বিল্ডিংয়ে টিএমসি জিতল ২১০০ ভোটে। কারচুপি হলে সেটি কীভাবে হল? শুভেন্দু বলেন, 'যুক্তিতে না পেরে তিনি লোডশেডিংয়ের দাবি করছেন।'
বিধানসভার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, 'মাননীয় অধ্যক্ষ খালি ডানদিকের চোখ খুলে রেখেছেন। ২১ সালে জয়ের পর আমাকে অধ্যক্ষ নন্দীগ্রামের জনগণকে অভিনন্দন জানাতে দেননি। বলেছিলেন এটি বিচারাধীন। বলা যাবে না। আমার ক্ষেত্রে বিচারাধীন হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তাই হল না কেন?'
মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন, 'আতঙ্কিত, বিচলিত, দিশেহারা, কার্যত উভ্রান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।'
বিধানসভা পরিচালনাও সুষ্ঠু হচ্ছ না বলে দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, বিল না থাকলেও বিধানসভা চালনা করা যায়। প্রশ্নোত্তর, প্রাইভেট মেম্বার বিল, সরকারের পক্ষ থেকে জনস্বার্থ এবং রাজ্যের প্রস্তাব করা যায়। সব কিছু মিলিয়েই বিধানসভাকে মিনিংফুল করা যায়। কিন্তু তৃণমূল সরকারের সেই ইচ্ছা নেই। তাই বিধানসভার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর এমন কথা বের হয়।'
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন এলেই আক্রমণ করা হয়। মহিলা কমিশন, শিডিউল ট্রাইব কমিশনেরও বিরোধিতা করা হয়। কারও জন্মদিনে কারও নাম না নিয়ে টুইট করলে আমার বিুরুদ্ধে নোটিশ হয়। আর খড়গপুরে চার বছরের বাচ্চা মেয়ে কুখ্যাত গুণ্ডাদের হাতে নির্যাতিত হলে তার ব্যবস্থা হয় না।'
তিনি আরও বলেন, 'ঘাসখালিতে ক্লাস নাইনের কিশোরীকে জন্মদিনে ডেকে তৃণমূল পঞ্চায়েত উপপ্রধানের ছেলে গায়ে মদ ঢেলে শারীরিক অত্যাচার করে বিনা চিকিত্সায় শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অবস্থা এমন।'
বিধানসভায় বিরোধী দলকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁদের জন্য সময় সীমিত রাখা হচ্ছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু।
পঞ্চায়েত ভোটের কারচুপির প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, 'কত ভোটার এবার পঞ্চায়েতে হাতে কালি লাগাতে পারেনি। এক কোটিরও বেশি। আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে বলছি, গ্রামীণ পঞ্চায়েতের অন্তত ১ কোটি ভোটার ভোট দিতে পারেননি।'