রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের সংঘাত তীব্র আকার নিয়েছে। ইতিমধ্যেই উপাচার্য নিয়োগের কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি রাখতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যপালের অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্তে এখনই কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। এবার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কী ধরনের শৃঙ্খলা শেখানো হয়, কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়, তারও বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। যাতে সার্চ বা সিলেকশন কমিটিতে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশেষজ্ঞ রাখা যায়। শুধু তাই নয়, রাজ্য এই মুহূর্তে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কী নিয়ম আছে, সেই নিয়মে কোনও পরিবর্তন করা হয়েছে কি না, তাও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবার বিচারপতি সূর্যকান্ত ও দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চের বক্তব্য, কোনও পক্ষের মনোনীত বিশেষজ্ঞই কমিটিতে বাড়তি গুরুত্ব পাবে না। কোনও ইলেকশন প্রসেস নয়, সিলেকশন প্রসেস-এর মাধ্যমে করা হবে উপাচার্য নিয়োগ। রাজ্য সরকারের আবেদন, সিলেকশন কমিটিতে দুজন নমিনি রাখা হোক। একজনকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করবেন, আরেকজনকে শিক্ষা দফতর। এদিন শুনানি চালকালীন সুপ্রিম কোর্ট বলে, 'আমরা কারও নির্দেশে চলব না। এটি সম্পূর্ণ বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্ত। আমরা কমিটির জন্য যেটা ভাল, সেই সিদ্ধান্তই নেব।'
রাজ্যে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। শিক্ষা দফতরকে না জানিয়েই তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তারপর থেকেই তীব্র সংঘাত চলছে। আগের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আদালতই একটি সার্চ কমিটি তৈরি করে দেবে। সেই কমিটি উপাচার্য নিয়োগ করবে। কমিটিতে কারা থাকবেন, সেই নামের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল রাজভবন, রাজ্য শিক্ষা দফতর ও ইউজিসি-কে।
এর আগে কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির গঠনে বদল এনেছিল রাজ্য। আগের সার্চ কমিটির তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপাল, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। পরে কমিটির সদস্য সংখ্যা করা হয় ৫। বলা হয়, পাঁচ সদস্যের মধ্যে থাকবেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর এক জন প্রতিনিধি, উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক জন প্রতিনিধি, উচ্চ শিক্ষা সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর এক জন করে প্রতিনিধি। সার্চ কমিটিতে এই পরিবর্তন আনার জন্য একটি অর্ডিন্যান্স পাশ করেছিল রাজ্য।