দেশজুড়়ে কার্যকর হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)। ঠিক লোকসভা ভোটের মুখে বড় ঘোষণা করল কেন্দ্রের মোদী সরকার। সিএএ ঘোষণার পরেই বাংলায় রীতিমতো উত্সব শুরু করে দিয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের (Matua) মানুষরা। ঠাকুরনগরে সোমবার সন্ধ্যাতেই ঢাক বাজিয়ে নাচ শুরু করেন মতুয়া সম্প্রয়াদের লোকেরা। মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি CAA। এখন প্রশ্ন উঠছে, CAA কার্যকর হওয়াতে মতুয়াদের কীভাবে লাভ?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে গেম চেঞ্জার মতুয়া সম্প্রদায়
বস্তুত, মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও পেয়েছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ঠাকুরনগরে গিয়ে মতুয়া মহাসঙ্ঘের বড়োমা বীণাপানিদেবীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা। হরিনামে যাঁরা মেতে থাকেন, তাঁরাই মতুয়া। এই সম্প্রদায় তফশিলি জাতিভূক্ত নমঃশূদ্র। পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৬টি লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের প্রভাব রয়েছে। ১৯৭৭ সালে মতুয়া মহাসঙ্ঘ বামেদের দিকে ঝোঁকে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত মতুয়ারা বামেদেরই ভোটব্যাঙ্ক ছিল। ২০১০ সাল থেকে খেলা ঘুরতে থাকে। ২০১৪ সালে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন বড়মার ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। বঙ্গে তফশিলি জাতির ভোটের ১৭.৪ শতাংশ রয়েছে মতুয়াদের হাতে। ২০১৯ সালে রানাঘাট ও বনগাঁ কেন্দ্রে বড় জয় পেয়েছিল বিজেপি। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি,দার্জিলিং এবং কোচবিহার—তিন লোকসভা কেন্দ্রেই মতুয়া ভোট রয়েছে যথেষ্ঠ।
বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুর প্রেমভক্তিরূপ ধারাকে গতিশীল করতে যে সাধন পদ্ধতির প্রবর্তন করেন, তাই পরিচিত হয় মতুয়াবাদ বলে। ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জে ১৮১২ সালের ১১ মার্চ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম। দেশভাগের পরে মতুয়ারা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন।
CAA আসলে কী আইন?
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের জন্য এ দেশে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে CAA-তে। ওই দেশগুলি থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সিএএ-তে রয়েছে। এই আইনে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা বলা হয়নি। আইন অনুযায়ী, ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধনী আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।
মতুয়াদের একাংশের আনন্দ কেন?
সিএএ প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন, মতুয়ারা যখন ভোট দেন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে, তখন তাঁদের নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার দরকার নেই। যদিও মতুয়াদের একাংশের দাবি, ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে যে মতুয়া উদ্বাস্তুরা এ দেশে এসেছিলেন, তাঁদের পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে বা জমি কিনতে গেলে পুরনো দলিল চাওয়া হত। বাপ-ঠাকুরদার পরিচয় জানতে চাওয়া হত। নানা ভাবে তাঁদের হেনস্থা হতে হত। এমনকী, তাঁদের বে-নাগরিক বলে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হত। সিএএ কার্যকর হওয়ায় তাঁরা সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেলেন।