অস্ট্রেলিয়ায় মিলল এক ভয়ানক বিষাক্ত মাকড়সা। বৈজ্ঞানিকরা সেটির নাম দিয়েছেন মেগাস্পাইডার (Mega Spider)। এটি বিষাক্ত ফানেল ওয়েব স্পাইডার (Funnel Web Spider) প্রজাতির মাকড়সা। এটি এতটাই শক্তিশালী যে মানুষের নখও ফুটো করে দিতে পারে। এটিকে বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলসের অস্ট্রেলিয়ান রেপ্টাইল পার্কে (Australian Reptile Park) রাখা হয়েছে। সেখানে এই ধরণের মাকড়সার বিষ থেকে অ্যান্টি-ভেনম ওষুধ তৈরি করা হয়।
এই মেগাস্পাইডারটিকে গত সপ্তাহে এক ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ান রেপ্টাইল পার্কে দান করেছেন। মাকড়সাটিকে সিডনির সেন্ট্রাল কোস্ট থেকে ধরেছিলেন ওই ব্যক্তি।
অস্ট্রেলিয়ান রেপ্টাইল পার্কের জীব বিজ্ঞানীরা এই মাকড়সাটির আকার দেখে অবাক হয়ে যান। কারণ, সাধারণ এই প্রজাতির মাকড়সা ০.৪ থেকে ২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এটি ৩ ইঞ্চি লম্বা। এর বিষদাঁত ২ সেন্টিমিটার বা ০.৮ ইঞ্চি লম্বা। এই বিষয়ে পার্কের জীব বিজ্ঞানী মাইকেল টেট জানান, তিনি সেখানে ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন, কিন্তু এক বড় ফানেল ওয়েব স্পাইডার আগে দেখেননি।
এটি একটি স্ত্রী মাকড়সা। এটিকে যেখানে রাখা হয়েছে, তার গায়ে কে দিয়েছেন, কোথা থেকে পাওয়া গিয়েছে সমস্ত তথ্য দেওয়া রয়েছে। ফানেল ওয়েব স্পাইডারের ৪০টি প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে।
মাইকেল জানাচ্ছেন, এই মাকড়সা কমড়ালে ১৫ মিনিটে মৃত্যু নিশ্চিত। এদের চামড়া চকচকে এবং কম লোমযুক্ত হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্রতাপূর্ণ এলাকায় মাটির নিচে গর্ত করে এরা বসবাস করে।
গর্তের ওপরে থাকে জ্বাল। সেই জ্বালে কোনও পোকামাকড় আটকে গেলে বা তার সংস্পর্শে কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে মাকড়সাটি। তারপর শিকারের মৃত্যু হলে ধীরে ধীরে সেটিকে খায়। সারা বিশ্বে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান রেপ্টাইল পার্কেই ফানেল ওয়েব স্পাইডারের বিষ বের করা হয়। তারপর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেলবোর্নের ল্যাবে। সেখানে তৈরি হয় অ্যান্টি-ভেনম সিরাম।
অ্যান্টি-ভেনম তৈরির প্রক্রিয়াটিও বেশ আকর্ষণীয়। প্রথমে এই মাকড়সার বিষ অত্যন্ত কম পরিমানে খরগোশের শরীরে দেওয়া হয়। তাতে খরগোশের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারপর খরগোশের শরীর থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে সিরাম তৈরি হয়। অর্থাৎ যদি এই মাকড়সা মানুষকে কমড়ায় তাগলে খড়গোশের দেহ থেকে নেওয়া অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১৯৫০ সালে এই পার্কটি গড়ে ওঠে। এই পার্ক থেকে বানানো ওষুধ দিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
যাঁরা এই ধরণের মাকড়সা ধরেন তাঁদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিরাপদ পোশাক পড়ে মাকড়সা ধরা এবং ধরার পর সেটিকে কাঁচের পাত্রে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।