মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি দেশের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন। ট্রাম্পের জয়ে বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে কিছু দেশ এবং তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরা ট্রাম্পের বিজয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ইউক্রেন ও বাংলাদেশের মতো দেশ।
বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের জয় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে চলেছে। খালিস্তানের সমর্থক ট্রুডোকে গত এক বছর ধরে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে। কখনো তিনি কানাডার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতের দিকে নিজ্জর হত্যার অভিযোগ তুলছেন আবার কখনো লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। এসবের মধ্যে ট্রাম্পের মিত্র এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক, যিনি নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন, তিনি ট্রুডোকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, আগামী নির্বাচনে তার বিদায় নিশ্চিত।
এ কারণে ট্রাম্পের জয়ে ক্ষুব্ধ ট্রুডো!
ট্রুডো সম্পর্কে মাস্কের মন্তব্য থেকে বড় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, খালিস্তানিদের প্রতি ট্রুডোর নরম মনোভাবে ট্রাম্প খুশি নন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি তার বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের জয়ের কারণে ট্রুডোও ট্যারিফ ট্যাক্স নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। কানাডা তার রফতানির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে কানাডা সরকার। ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হন, তখন তিনি উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেন। এছাড়াও, প্রতিবেদন অনুসারে, অটো সেক্টরে ২৫ শতাংশ শুল্ক বিবেচনা করা হয়েছিল। ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ কানাডার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসও ট্রাম্পের জয়ে অস্বস্তিতে
বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পের জয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন। এর কারণ হলো, বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর অগাস্ট মাসে ইউনূসের হাতে ক্ষমতার লাগাম তুলে দেওয়া হয়। তাকে সাধারণত আমেরিকার মানুষ বলে মনে করা হয়। বাইডেন সরকারের সবুজ সংকেতের পর তাকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ট্রাম্প আগামী বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমেরিকা ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বড় ইউ-টার্ন আসতে পারে।
মহম্মদ ইউনূসের অস্বস্তির দ্বিতীয় বড় কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের পথে তার বামপন্থী মতাদর্শ আসতে পারে। ট্রাম্পের আগমনের পর বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। মহম্মদ ইউনূসের সরকারও জো বাইডেন সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত যে সমর্থন পাচ্ছে তা পাবে না। কারণ ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে দেখা করে। ওই প্রতিনিধিদলকে মহম্মদ ইউনূস সম্পর্কে প্রশ্ন করে ট্রাম্প বলেন, 'ঢাকার ওই মাইক্রো ফাইন্যান্সার কোথায়?' ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, 'আমি শুনেছি যে তিনি আমাকে নির্বাচনে হারাতে চায়। এ জন্য তিনি অনুদানও দিয়েছেন।' ট্রাম্প তখন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের কথা বলছিলেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশন 2016 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ছিল। ওই নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন।
ইউক্রেনের জেলেনস্কি ভাগ্য ঝুলে!
২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায় তখন আমেরিকাসহ পুরো ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ইউক্রেনের সমর্থনে রুখে দাঁড়ায়। আর এখন পর্যন্ত সেই অবস্থাই রয়েছে। তবে আমেরিকায় সরকার পরিবর্তনের পর আমেরিকা ও ইউক্রেনের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে। তবে আমেরিকার কাছ থেকে ইউক্রেন যে সামরিক সহায়তা পাচ্ছে তাও শেষ হতে পারে। সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারের সময় জেলেনস্কিকে নিয়ে বড় ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন যে জেলেনস্কি একজন দুর্দান্ত সেলসম্যান। যখনই সে আমেরিকায় আসে, লাখ লাখ ডলার নিয়ে যায়। এই পরিবর্তন করতে হবে.
জেলেনস্কি সম্পর্কে ট্রাম্প কী মনে করেন?
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে জয়ের পর জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এই ফোনালাপ ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে হয়নি। ইলন মাস্কও এই ফোনকল শুনছিলেন।