শ্রীলঙ্কার আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এশিয়ার মধ্যে এ দেশে মূল্যস্ফীতির মাত্রা সর্বোচ্চ এবং খাদ্য ও পানীয় জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পেট্রোল ও ডিজেলের ঘাটতি মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি চিনের ঋণের তলায় ইতিমধ্যেই করোনার প্রাদুর্ভাবে ভুগছে শ্রীলঙ্কার ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলেছে।
চিনের ঋণের জালে আটকে থাকা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শেষ হয়ে গেছে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। ডলারের তুলনায় শ্রীলঙ্কার মুদ্রা খারাপভাবে ভেঙে পড়েছে। কোভিড-মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার আগেই সোনার লঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার পথে।
আরও পড়ুন: আজও পড়ল সোনার দাম, সস্তা হল রুপোও! দেখে নিন আজকের দর
উল্লেখযোগ্যভাবে, শ্রীলঙ্কা তার বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই বিদেশ থেকে আমদানি করে। এই তালিকায় ওষুধ থেকে তেল সবই রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার মোট আমদানিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের অংশ ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা সরকার জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং তাদের দাম দিন দিন আকাশছোঁয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাসকাবারি খরচ প্রায় ৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: DA বাড়ল ৩%, নগদে বেতন বাড়বে কতটা? হিসাব বুঝে নিন
সে দেশে এখন চরম আকাল বিদ্যুৎ, ডিজেল, মোমবাতির। বুধবার থেকে শ্রীলঙ্কায় রোজ ১০ ঘন্টা করে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকছে। শ্রীলঙ্কার ৪০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুত জলবিদ্যুৎ থেকে তৈরি হয়। ফলে দিন ফুরলেই শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ বাড়ি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। জ্বালানির ঘাটতি তো আছেই, বৃষ্টির অভাবে অধিকাংশ নদী ও জলাশয়ে জল শুকিয়েছে। যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশিরভাগই আসে কয়লা ও তেল থেকে। শ্রীলঙ্কা এই দুটি জিনিসের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল।
একই অবস্থা ওষুধের দোকান ও হাসপাতালেরও। দেশে ওষুধ সংকটের কারণে দেশের হাসপাতালগুলিতে বেশিরভাগ অস্ত্রোপচারই বন্ধ রাখা হচ্ছে। জরুরি অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় অনেক রোগীর প্রাণহানির আশঙ্কাও বেড়েছে। বাজার চাহিদার তুলনায় ব্যাপক ঘাটতির ফলে শ্রীলঙ্কায় ১০টা প্যারাসিটামলের দাম এখন ভারতীয় মূল্যে ৪৫০ টাকা ছুঁয়েছে! ওষুধ, চিকিৎসার অভাবে সে দেশের অনেক মানুষ এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।