সিরিয়ার(Syria) রাজধানী বিদ্রোহীর দখলে। প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়েছেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বাসভবনে ঢুকে দেদার লুটপাট চালালেন বীর বিদ্রোহীরা। ছবিগুলি দেখলেই অগাস্টে বাংলাদেশের(Bangladesh) কথা মনে পড়তে বাধ্য। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ঠিক এভাবেই তাঁর বাসভবন, বঙ্গভবনে সরকারি সম্পত্তি লুটপাট চালিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। আসবাব, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তো বটেই, পুকুরের রঙিন মাছ এমনকি হাঁসও বাদ দেননি বিপ্লবীরা। সিরিয়াতেও এদিন দেখা গেল সেই একই ছবি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে শয়ে শয়ে বিদ্রোহী। লুট করার প্রতিযোগিতা চলছে তাদের মধ্যে। জিনিসপত্র নিয়ে রীতিমতো টানাটানি করছেন।সর্বত্র জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ আবার অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্রের মধ্যে চুরি করার মতো কিছু আছে কিনা, সেটা খুঁজছে।
যে যার নিজের ধান্দায়!
নিচের ছবিতে একজন মহিলাকে ডিজাইনার পোশাক পরে প্রেসিডেন্টের বাসভবন থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে। মহিলার কাঁধে জামাকাপড়ের স্তূপ। আনন্দে নাচছেন। বাংলাদেশেও ঠিক একইভাবে শেখ হাসিনার বিভিন্ন দামি দামি শাড়ি লুট করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।
প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে লোকে শুধু লুটপাটই করেনি। অনেকে আবার বিছানায়, সোফায়, টেবিলে বসে সেলফিও তোলে। বঙ্গভবনেও শেখ হাসিনার শয়ন কক্ষের বিছানায় এভাবেই শুয়ে সেলফি তুলছেন ছাত্ররা।
২০১১ সালে সিরিয়াতে গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। বাশার আল-আসাদ এই আন্দোলনকে বিদেশি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসবাদী বলেন। সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ নেয়। এতেই বিক্ষোভ আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। অচিরেই এই আন্দোলন একটি বড় সশস্ত্র সংঘর্ষের রূপ নেয়।
নিচের ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলন শেষে জয়ের উদযাপন করছেন বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্টের ভবনে দেদার তছনছ, লুটপাট চালাচ্ছেন। দামি কিছু পেলেই কাঁধে তুলে বেরিয়ে আসছেন। ঠিক যেমনটা শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশেও হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর বিরোধী যোদ্ধারা সিরিয়ান সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করে। প্রথম হামলাটি হয় বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত ইদলিব এবং প্রতিবেশী আলেপ্পোয়। তিন দিন পর বিরোধী যোদ্ধারা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে।
সিরিয়ায় বিরোধী হায়াত তাহরির আল-শাম সংগঠনের নেতৃত্বে অপারেশন ডিটারেন্স অব এগ্রেশন শুরু হয়। এইচটিএস হল বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সংগঠিত বিরোধী গ্রুপ। এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি।
সিরিয়ার আগে কোথায় অভ্যুত্থান হয়েছিল?
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে লোকে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। আন্দোলনকারী ছাত্ররা প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালায়।
এর আগে ২০২২ সালের ৮ জুলাই শ্রীলঙ্কায় একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে ঢুকে ব্যাপক লুটপাট চালায়। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া দেশ ছাড়েন।
আফগানিস্তান ২০২১ সালের অগাস্টে তালিবানদের দখলে আসে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পরেই, তালিবানরা আক্রমণ করে।আফগান সেনাবাহিনী পরাজয় স্বীকার করে। এদিকে দেশ ছেড়ে পালান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।
আসাদ দেশ ছাড়ার পর সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল জালালি একটি ভিডিওতে বলেছেন যে, তিনি দেশেই থাকবেন এবং সিরিয়ার জনগণ যাকে নির্বাচন করবে তার সঙ্গে কাজ করবেন।
গত এক সপ্তাহে রাজধানী দামাস্কাস ছাড়াও সিরিয়ার চারটি বড় শহর দখল করেছে বিদ্রোহীরা। এখন প্রশ্ন একটাই, সিরিয়ায় এরপর কী হবে? সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসন এবং দেশে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। এখন সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস হায়াত আল-শামের নিয়ন্ত্রণে।