পশ্চিমে শরিয়ত আইনের রাজধানী ব্রিটেন? সেদেশে এখন ৮৫টি ইসলামিক শরিয়ত আদালত রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ব্রিটেনের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই শরিয়ত আদালতের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। সমগ্র ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মুসলমানরা বিয়ে এবং অন্য পারিবারিক বিষয়ে এই আদালতগুলির দ্বারস্থ হচ্ছেন। দ্য টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সেদেশের ন্যাশানাল সেকুলার সোসাইটি এই নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা এর ফলে দেশে একটি প্যারালাল বিচার-আইনি ব্যবস্থা তৈরি হবে। যদিও ব্রিটেনে শরিয়ত কাউন্সিলের আবির্ভাব নতুন নয়। ১৯৮২ সালে সেদেশে প্রথম শরিয়ত আদালতের প্রতিষ্ঠা হয়।
শরিয়া কাউন্সিলের কার্যপ্রণালী নিয়ে যদিও বিতর্কের শেষ নেই। অনেকের মতে, এখানে নারী-বিরোধী এবং সময়ের সঙ্গে অনুপোযগী ধারণার ভিত্তিতে বিচার করা হচ্ছে।
গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ইসলামিক শরিয়া কাউন্সিল, পূর্ব লন্ডনের লেটনে অবস্থিত। এটি একটি রেজিস্টার্ড দাতব্য সংস্থা। নিকাহ (বিবাহ) পরিষেবা, তালাক এবং খুলা (স্ত্রীরা যখন বিচ্ছেদ চান) বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া দেখভাল করে এই শরিয়ত কাউন্সিল।
উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, এই শরিয়ত কাউন্সিলের নিজেদের অ্যাপও রয়েছে। সেখানে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে বসবাসকারী মুসলমানরা ইসলামিক শরিয়ত আইন সম্পর্কে জেনে নেন।
এই অ্যাপে পুরুষরা একটি ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে তাঁদের কতজন স্ত্রী আছে, সেটাও সিলেক্ট করতে পারেন। অর্থাৎ, এক থেকে চারটি পর্যন্ত অপশন দেওয়া হয়েছে। শরিয়া আদালতও এতে অনুমোদন করেছে। অর্থাৎ, এই শরিয়ত আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পুরুষের ৪ জন পর্যন্ত স্ত্রী থাকতে পারে।
ব্রিটেনে ১ লাখ ইসলামিক বিয়ে আনরেজিস্টার্ড
UK-র এই শরিয়া আদালতগুলির মাথায় ইসলামিক পণ্ডিতরা। তাদের কমিটি এর দেখভাল করে। আবার এই কমিটি সদস্যদের বেশিরভাগই পুরুষ। এঁদের কাজ বিবাহবিচ্ছেদ এবং বিবাহ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে ধর্মীয় আদেশ জারি করা।
ধর্মতাত্ত্বিক এবং অধ্যাপক মোনা সিদ্দিকী জানালেন, 'শরিয়া হল নবী মহম্মদের সময় থেকে, সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত ইসলামিক পন্ডিতদের মতামতের উপর ভিত্তি করে গঠিত আইনশাস্ত্র।'
রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্রিটেনে এমন প্রায় ১ লক্ষ ইসলামিক বিয়ে আছে, যার কোনও সরকারি রেজিস্ট্রিই হয়নি। ফলে সেদেশের ডিভোর্স আইনের নিয়মও মহিলাদের নাগালের বাইরে।
ইসলামিক বিয়েতে বিচ্ছেদের জন্য তাই সম্পূর্ণ আলাদা নিয়ম আছে। বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ধর্মীয় পরিষদের অনুমোদন চাইতে হয়।
তবে সবই যে সেই ত্রয়োদশ শতকের মতোই রয়ে গিয়েছে, এমনটা কিন্তু নয়। বেশিরভাগ মুসলিম দেশ শরিয়া সংশোধন করেছে। কিন্তু বিয়ে এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তারা প্রায় আগের নিয়মই মেনে চলে।
আর সেই নিয়ম অনুযায়ী কোনও মহিলা চাইলেই সহজে তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে পারেন না। তার জন্য এই শরিয়ত আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়া-জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
ইসলামিক আদালত সম্পর্কে ন্যাশানাল সেকুলার সোসাইটির উদ্বেগ
ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটি ব্রিটেনের একটি সংগঠন। এরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচার করে। শরিয়ত আদালতের মাধ্যমে ব্রিটেনে একটি সমান্তরাল আইনি ব্যবস্থার উপস্থিতি সম্পর্কে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সোসাইটির প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ইভান্সের কথায়, 'সকলের জন্য এক আইনের নীতিকেই এটি ক্ষুণ্ন করে'। তাঁর দাবি, 'এর ফলে এবং নারী ও শিশুদের অধিকারের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।'
তিনি বলেন, 'মনে রাখবেন, শরিয়া কাউন্সিল টিকে থাকার একমাত্র কারণই হল, মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তাদের(শরিয়ত কাউন্সিল) প্রয়োজন। মুসলিম পুরুষদের কিন্তু কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ তাঁরা স্ত্রীকে একতরফাভাবে তালাক দিতে পারে।'
শুধু তাই নয়, এই শরিয়ত আদালত 'নিকাহ মুতআহ'-র সপক্ষেও আইন প্রক্রিয়া চালা। নিকাহ মুতআহ কী?ইসলামে, নিকাহ মুতআহ-র অর্থ আনন্দ বিবাহ। এটি একটি অস্থায়ী বিয়ে। বিয়ের আগেই ক'দিন বিয়ে টিকবে, তা নির্ধারিত হয়ে যায়। পুরুষ মহিলাকে সম্মতিক্রমে টাকা দিয়ে দেয়।