ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর কথায়,'ভারত শক্তিধর দেশ'। ভারতের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে,'প্রতিরক্ষা থেকে অর্থনীতি- প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আধিপত্যের উল্লেখও করেন তিনি। পুতিনের মতে, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভারত।
পুতিনের এই বক্তব্যে চিন-পাকিস্তানের অস্বস্তি কেন বাড়বে?
পুতিন বহুবার ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা করেছেন। যা চিনের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে 'শান্তিদূত' হওয়ার চেষ্টা করছে বেজিং। ১২ দফা পরিকল্পনাও পেশ করেছিল। কিন্তু আলোচনা এগোতে পারেনি। অন্যদিকে, পুতিন একবার বলেছিলেন যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ভারত বড় ভূমিকা নিতে পারে। দ্বিতীয় কারণ,চিনও বড় শক্তি হওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, ভারত সকলের সমর্থন চায়। এখন যেহেতু পুতিন ভারতকে বড়শক্তি হিসেবে আখ্যয়িত করলেন, তা চিনের আঁতে ঘা লাগাতে পারে।
পুতিনের বক্তব্যে পাকিস্তানেরও অস্বস্তি
রাশিয়া কখনও ভারতের স্বার্থবিরোধী কিছু করেনি। সেটা পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বা ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ হোক- রাশিয়া প্রতিবারই ভারতকে সমর্থন করেছে। শুধু তাই নয়,সম্প্রতি রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিনের সহায়তায় পাকিস্তানও ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। কিন্তু ভারতের অমত থাকায় তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পুতিন যখন আবার ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছেন, তা পাকিস্তানের ক্ষতে নুন ছিটিয়ে দেওয়ার মতো!
'আমাদের সম্পর্কের জন্য অনুবাদকের প্রয়োজন নেই'
ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। জুলাই মাসে কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে (এসসিও) শামিল হননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ব্রিকসে যোগ দিতে কাজান গিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী হিন্দিতে এবং রাষ্ট্রপতি পুতিন রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছিলেন। দুই নেতার কথা রুশ ও হিন্দিতে অনুবাদ করতে অনুবাদকরা ছিলেন। কিন্তু পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেন,'ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ যে আমার মনে হয় না অনুবাদকের সাহায্য দরকার! অনুবাদক ছাড়াও নিজেদের কথা বুঝতে পারব'। পুতিনের বন্ধুত্বের বার্তাকে হেসে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী।
গত ৮ জুলাই রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। পুতিন-মোদীর আলিঙ্গন পশ্চিমি দেশগুলির পছন্দ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্তা দিয়েছিল, ভারতকে একটি পক্ষ বেছে নিতে হবে। তারা নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। নয়াদিল্লি অবশ্য নিজেদের বিদেশনীতির অবস্থানেই অনড়। মোদী বার্তা দিয়েছিলেন,'বোমা এবং গোলাগুলির মধ্যে শান্তি আলোচনা সফল হতে পারে না। সংঘাতের সমাধান যুদ্ধ হতে পারে না'।