বিশ্বের সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এবারও বিশ্বের সুখীতম দেশ (World Happiness Index 2023) ফিনল্যান্ড। তালিকায় ফিনল্যান্ড শীর্ষে। অর্থাত্, ফিনল্যান্ডের নাগরিকরা ভীষণ সুখে দিন কাটাচ্ছেন। বিশ্ব সুখী রিপোর্ট ২০২৩ (World Happiness Report 2023)-এ সব দেশের আয়, স্বাস্থ্য ও জীবনশৈলী, স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঁচার মানদণ্ডের প্রেক্ষিতে তালিকা তৈরি করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ১৩৭টি দেশের এই তালিকায় ভারতের স্থান ১২৫। অর্থাত্ বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ১২৪ নম্বর স্থানে আমাদের দেশ।
পড়শি দেশগুলিও ভারতের চেয়ে সুখী
গত বছরের তুলনায় ভারতের স্থান খানিকটা ভাল। ২০২২ সালে ভারত ছিল ১৩৬ নম্বরে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, পড়শি দেশ নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চিনের থেকে নীচে। যার নির্যাস, আমাদের পড়শি দেশগুলির বাসিন্দারা আমাদের চেয়ে সুখে রয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও সুখী দেশের তালিকায় ১২৪ নম্বরে ভারত। সেখানে এক বছরের বেশি সময় যুদ্ধ বিধ্বস্ত, আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত ইউক্রেন ভারতের চেয়ে বেশি সুখী। তালিকায় তেমনই দেখা যাচ্ছে। ফলত, প্রশ্ন উঠছে, সঙ্কটে থাকা দেশগুলির তুলনায় সুখী তালিকায় কীভাবে এতটা নীচে ভারত?
কোন মানদণ্ডে নির্ধারিত হয় এই সুখী দেশের তালিকা?
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স (World Happiness Index) তৈরি করতে মূলত ৬টি মুখ্য বিষয় খতিয়ে দেখে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এগুলি হল, আয়, সুস্থ জীবনের আনুমানিক বয়স, সামাজিক সহযোগিতা, স্বাধীনতা, বিশ্বাস ও উদারতা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, হ্যাপিনেস ইনডেক্স তৈরি করতে গড় জীবনের মূল্যায়নকে ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে। এরমধ্যে COVID-19 অতিমারির ৩ বছরের (২০২০-২০২২) মূল্যায়নও শামিল। এ বছর রিপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে দেখা হয়েছে, COVID-19 জনকল্যাণমূলক কাজকে কতটা প্রভাবিত করেছে। মানুষের মধ্যে পরোপকারিতা বেড়েছে না কমেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, পরোপকার ও সামাজিক সম্পর্ককেও সুখী তালিকার ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছে।
রিপোর্ট ফিনল্যান্ড লাগাতার ৬ বার বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ নির্বাচিত হয়েছে। এরপরেই ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইজরায়েল ও নেদারল্যান্ডস রয়েছে। রিপোর্টে পাকিস্তানের র্যাঙ্ক ১০৩ নম্বরে রয়েছে। রাশিয়া ৭০ নম্বরে ও ইউক্রেন ৯২ নম্বর স্থানে রয়েছে।
নর্ডিক দেশগুলির মধ্যে (অর্থাত্ উত্তর ইউরোপের দেশগুলি) সামাজিক বিশ্বাস ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রবণতা ভাল। কোভিড মহামারির সময় নর্ডিক দেশগুলিতে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির তুলনায় মৃত্যুর হার কম ছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে যে খানে প্রতি লাখে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে নর্দান ইউরোপের দেশগুলিতে সংখ্যাটা ২৭।
রাশিয়া ও ইউক্রেন ভারতের চেয়ে কীভাবে সুখী?
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্সে রাশিয়া ৭০ ও ইউক্রেন ৯২ নম্বরে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই র্যাঙ্কিং নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে এই দুই দেশেই নাগরিক সমাজে পরোপকারিতা বেড়েছে। অর্থাত্ সমাজে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০২২ সালে ইউক্রেনে সমাজিক পরোপকারিতা দ্রুত হারে বেড়েছে।
ফিনল্যান্ড কেন শীর্ষে?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট বলছে, ফিনল্যান্ডে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ইউনিভার্সাল হেল্থ কেয়ার সিস্টেম রয়েছে। যার ফলে, ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য সে দেশের সরকারের চিকিত্সা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। আয়ের বৈষম্য যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে তত্পর থাকে সরকার। দেশটির প্রতিটি নাগরিক বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। সাধারণ ঘরের শিশুরাও সহজেই ভাল জায়গা পৌঁছতে পারে। দুর্নীতি নেই, নাগরিক নিরাপত্তা ভাল-- সব মিলিয়েই ফিনল্যান্ড আবারও শীর্ষে। সুখীতম দেশ।